শুরুর দিকে কোভিড যে রূপ দেখিয়েছিল, কালে কালে তার অনেকটাই বদল হয়েছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে বয়স্করাই কাবু হয়ে পড়ছেন এ অসুখে, তরুণদের তেমন কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু সেকেন্ড ওয়েভে সে ধারণাকে একেবারেই মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস।
সেকেন্ড ওয়েভে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে – কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর্বটা অন্য কোনও সাধারণ অসুখের মতো নয়। শরীর দিন দিন সুস্থ হয়ে ওঠে না, একদিন ভালো হলে তিনদিন খারাপ থাকে। আরটি-পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ আসার পরেও শরীরের নানা অঙ্গে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ থাকে, কারণ সেখানে তখনও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চলছে।
সোয়াব টেস্ট নেগেটিভ আসার অর্থ হচ্ছে আপনার নাকে বা গলায় ভাইরাস নেই, তার মানে এই নয় যে তা শরীর থেকে চলে গিয়েছে পুরোপুরি। যাঁরা গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন, তাঁদের সমস্যাও চলে বেশিদিন ধরে। সেই কারণেই কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ – চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ওঠার আগেই কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে হৃদযন্ত্র। যাঁদের কোনও কো-মর্বিডিটি নেই, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমনটা হচ্ছে সেরে ওঠার দু’-তিনমাস পর।
কিছু মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে – সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, রাতে লাগাতার ঘুম না আসা, ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা কিছুদিনের মধ্যে সেরে যাওয়ার কথা। যদি দেখেন জটিলতা বাড়ছে, আর আপনার মন খারাপ সারছেন না কিছুতে, তা হলে মনোবিদের দ্বারস্থ হতে হবে। কোভিড থেকে সেরে উঠেই কাজে বেরিয়ে পড়বেন না, ওয়ার্কআউট শুরু করে দেবেন না। চলবে না প্রচুর তেলমশলা দেওয়া খাবার। হালকা, সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে – বিশ্রাম নিতে হবে।
কোন কোন লক্ষণ বিপদের বার্তা বয়ে আনে?
. যদি আপনার হার্টের পেশিতে প্রদাহ চলে, তা হলে বুক ধড়ফড় করবে, বুকে চাপ বোধ হবে, হার্ট রেট বেড়ে যেতে পারে। অক্সিমিটার দিয়ে নিয়মিত পালস রেট মনিটর করা দকার।
. পালস রেট খুব বেড়ে গেলে বিপদ, খুব কমে ৪০-এর নিচে নেমে গেলেও সমস্যা। সব ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
. অনেক রোগীর ক্ষেত্রে হার্ট বা ফুসফুসের পেশিতে থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে, তার ফলেও আচমকা মৃত্যু হচ্ছে। আপনার কি ডি-ডাইমার টেস্ট হয়েছিল? এই টেস্টে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা দেখা গেলে ডাক্তাররা অ্যান্টি কোয়াগুলেশন ট্রিটমেন্ট করছেন।
. গাঁটে গাঁটে ব্যথা। জীবনে কোনওদিন আর্থারাইটিসের সমস্যা ছিল না, এমন রোগীর ক্ষেত্রেও অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কারণে হাড়ের জোড়গুলিতে প্রোটিন জমে যাচ্ছে। বেশি করে জল খান এবং ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন কী সমস্যা হচ্ছে।
. যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা বাড়তি সতর্ক থাকুন। ফুসফুস ভালো রাখার জন্য আপনাদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে, সেই সঙ্গে ধূমপান ছাড়তে পারলে ভালো হয়