কোভিডে যাঁরা হোম আইসোলেশনে আছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড়ো আতঙ্ক হচ্ছে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়া। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনাদের বাড়িতে এখন থার্মোমিটারের পাশাপাশি পালস অক্সিমিটারও রয়েছে এবং কোনও রোগী থাকলে জ্বরের সঙ্গে তাঁর অক্সিজেন মাপা হচ্ছে নিয়মিত – মনে রাখবেন এর উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আপনার ডাক্তার ওষুধের ডোজ ঠিক করবেন এবং পুরো চিকিৎসা চলবে।
যেহেতু চাইলেই অক্সিজেন মিলছে না এখন এবং হাসপাতালে বেড পেতেও সমস্যা হচ্ছে – তাই আপনাকে আস্থা রাখতে হবে ঘরোয়া সমাধানের উপরই। ভারত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক তেমনই একটি উপায় অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে – তার পোশাকি নাম প্রোনিং।
শুনতে গালভারি হলেও বাচ্চারা যেভাবে পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়, তাকেই প্রোনিং বলা হয়। এর ফলে আপনার শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। উপুড় হয়ে শোওয়ার সময়ে বুকের নিচে আর কোমরের নিচে কয়েকটা বালিশ বা ভাঁজ করা চাদর গুঁজে দিন। পেটের কাছটা যেন মাটির সঙ্গে লেগে না থাকে তা দেখতে হবে – তাতে আপনার ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদার উপর কোনও চাপ পড়বে না এবং লম্বা শ্বাস নিতে সুবিধে হবে।
প্রোনিং পদ্ধতির নানা ধাপ আছে। বুকের উপর চাপ দিয়ে খানিকক্ষণ থাকার পর রোগীকে পাশ ফিরিয়েও দেওয়া যায়। তবে যাঁরা গর্ভবতী, হার্টের সমস্যা বা থ্রম্বোসিস আছে, তাঁরা এই পদ্ধতি ট্রাই করবেন না। আর অতি অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
খাওয়াদাওয়ার পরে এক ঘণ্টা উপুড় হয়ে এভাবে শোবেন না। ততক্ষণই শোবেন যতক্ষণ শ্বাস নিতে সুবিধে হচ্ছে। যদি দেখা যায় যে প্রোনিংয়ের ঘণ্টাখানেক বাদেও রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ছে না, তা হলে দেরি না করে ফের ডাক্তারকে জানান। এর পর কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত উনি নেবেন।
হাসপাতাল বা সেফ হোম ফেসিলিটিতে নার্সের তত্ত্বাবধানে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়, বাড়িতে খুব অসুস্থ কোনও রোগীর উপর তা ট্রাই করার আগে ভালো করে ভিডিয়ো দেখে নিন। কিছুদিন আগে গুজরাতের এক অশীতিপর বৃদ্ধা এই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে কোভিডকে হারিয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন।
তবে সেই সঙ্গে মন্ত্রকের তরফে এও জানানো হয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে এই পদ্ধতি কাজের – পরে যদি অন্যরকম সাক্ষ্যপ্রমাণ হাতে আসে, তা হলে এ পদ্ধতি বাতিল বলেও ঘোষণা করা হতে পারে।