বিভিন্ন সমীক্ষার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন যে ভারতে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুত হারে। কিন্তু জানেন কি, স্রেফ সচেতনতা থাকলেই একেবারে প্রথমদিকে রোগ ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসায় সাফল্য মেলার হারও বেশি হয়?
বিশেষ করে যদি আপনার পরিবারে কারও ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, আর্থাৎ মা, বোন বা রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়া যদি ৪০-এর কম বয়সেই স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন বা ৬০ বছরের আগেই গর্ভাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে থাকে, তা হলে ৩০ বছরের পর থেকেই ডাক্তার দেখাতে হবে নিয়মিত।
‘‘এঁদের জেনেটিক কাউন্সেলিং ও জেনেটিক টেস্ট করানো দরকার। জেনেটিক অ্যানালিসিস পজ়িটিভ হলে সার্জেন ম্যাসটেকটোমি করিয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর ‘গেইলস ক্রাইটেরিয়া’ অনুযায়ী যাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির হার বেশি, তাঁদের সব সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে’’, বলছেন ফর্টিস আনন্দপুর হাসপাতালের মেডিকাল অঙ্কোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য।
স্তনের স্বাস্থ্য পরীক্ষাটা যে কোনও সচেতন মহিলা নিজেই করতে পারেন এবং কখনও কোনও সন্দেহ দেখা দিলেই দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একেবারে প্রথমদিকে ধরা গেলে স্তনের ক্যানসারসহ আরও নানা সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে ফেলা সম্ভব।
তাই অবহেলা না করে স্তনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আজ থেকেই সচেতন হোন। আরও একটা কথা জানিয়ে রাখা জরুরি – কোথাও কোনও সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারলে প্রথমেই টেনশনে ভেঙে পড়বেন না। ক্যানসার ছাড়াও আরও নানা রোগের কারণে স্তনের আকারে পরিবর্তন আসতে পারে, তাই ডাক্তার না দেখিয়ে কোনও ব্যাপারেই নিশ্চিত হওয়া ঠিক না।
অঙ্কোলজিস্ট ডা. তাপ্তী সেন খুব সহজ কতগুলি উপায় বাতলে দিচ্ছেন স্তন পরীক্ষা করার। স্নানের পর বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সহজেই এই পরীক্ষাগুলি করতে পারবেন। যে পয়েন্টগুলি দেখা দরকার, তা হল:
১. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্তনের দিকে সোজা তাকিয়ে দেখুন, তার আকারে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ছে কী?
২. দু’ হাত মাথার উপর তুলে দেখুন কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ছে কিনা।
৩. কোমরে হাত রেখে দাঁড়ান আয়নার সামনে। দেখুন স্তনের গঠনে কোনও পরিবর্তন আসছে কিনা।
৪. চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, দুটো হাত ছড়িয়ে দিন দু’পাশে। ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও বাঁ হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন। আঙুলগুলি রাখুন কাছাকাছি, এবার হাতের তালু দিয়ে পুরো স্তনের আনাচকানাচ খুঁজুন।
৫. স্তনের পাঁচটি ভাগ আছে, আপার ইনার, লোয়ার ইনার, আপার আউটার, লোয়ার আউটার আর সেন্ট্রাল। পুরোটা খতিয়ে দেখুন। অস্বাভাবিকতা দেখলেই ডাক্তার দেখান।
৬. স্তনবৃন্ত থেকে কোনও ক্ষরণ হলেও সাবধান হতে হবে।
৭. প্রতি মাসে একবার এইভাবে চেকআপ করুন।
ডা. অগ্নিমিতা গিরি সরকার ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের কাজ করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, বেশিরভাগ অল্পবয়সি, শিক্ষিত, শহুরে মহিলা ভাবতেই পারেন না যে এই মারণ রোগ যে কোনও মুহূর্তে হানা দিতে পারে। তাঁদের ধারণা ভালো খাওয়াদাওয়া-ব্যায়াম করলেই বুঝি ক্যানসার থেকে দূরে থাকা যায়।
তার চেয়েও বড়ো সমস্যা হচ্ছে নানা ভুল ধারণা। অনেকেই ভাবেন বায়োপসি বা FNAC করালে ক্যানসার আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই চিকিৎসা শুরু করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। মনে রাখবেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিটি দিনঅত্যন্ত জরুরি। প্রথমদিকে রোগ নির্ণয় হলে পুরোপুরি সেরে ওঠাও সহজ হয়।