বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরেও নির্দিষ্ট কিছু বদল আসে। বয়ঃসন্ধির সময়ে যেমন কিছু হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তেমনই আবার মাঝবয়সে পৌঁছলে তা কাজ করা বন্ধ করে দেয় ধীরে ধীরে। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা হয়।
তবে মেয়েদের যেভাবে মেনোপজ হয়, পুরুষদের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। মহিলাদের ৪০-এর পর ধীরে ধীরে স্ত্রী হরমোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে আরম্ভ করে কাছাকাছি বয়স থেকেই, তবে তার হার অত্যন্ত কম।
সাধারণত ৩৫-এর আশপাশ থেকে বছরে ১.৫-২ শতাংশ হারে টেস্টোস্টেরন কমে সুস্থ, স্বাভাবিক পুরুষদের। পরিবারের জিনগত ইতিহাস অনুযায়ী সময়ের একটু এদিক–ওদিক হতে পারে অবশ্য। এতে শারীরিক কোনও অসুবিধে হয় না, তাই পরীক্ষা করানো হয় না এবং ধরাও পড়ে না। অনেক সময়েই টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার ফলে যে সব লক্ষণ দেখা দেয়, তা বয়সজনিত অন্য কোনও কারণে হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
এবার প্রশ্ন, টেস্টোস্টেরন কমে গেলে কি দৈনন্দিন জীবনে কোনও অসুবিধে হতে পারে? সাধারণত হয় না। তবে যদি দেখা যায় যে যৌন আগ্রহ কমছে, কোনও কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না, এনার্জি লেভেলে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, রাতে ঘুম আসছে না, ক্রমশ ভুঁড়ি বাড়ছে, স্তনের কাছটা ভারী হচ্ছে তা হলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে। অনেকে এই সময়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভোগেন, হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। লক্ষণ দেখে সেই মতো চিকিৎসা করা উচিত।
এই অবস্থায় সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অন্য কয়েকটি কারণ। টেস্টোস্টেরন কমলেই কিন্তু কমতে আরম্ভ করবে আপনার হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি এবং মাসল মাস। মাসল কমা মানেই শরীরে ফ্যাট জমবে, বাড়বে ওবেসিটির আশঙ্কা। আর ওবেসিটির খপ্পরে পড়া মানেই হচ্ছে আপনি ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনকে নেমন্তন্ন করে ডেকে আনছেন। হাড়ের ঘনত্ব কমার কারণে অস্টিওপোরোসিস হলে কিন্তু হাড় ভাঙবে চট করে, তা জোড়া লাগতে সময় নেবে অনেক বেশি।
তাই মাঝবয়সে পৌঁছনোর পর নিজের রোজের জীবনচর্যায় বদল আনুন। রাশ টানুন অতিরিক্ত ধূম বা মদ্যপানে। বেশি রাত জাগবেন না। চেষ্টা করুন সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার, খানিকটা ব্যায়াম করার। সারাদিন বসে কাটাবেন না, হাঁটাচলা করুন। রাতের খাবার খুব বেশি দেরি করে না খাওয়াই ভালো, সারাদিন অল্প অল্প করে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আপনার জীবনে যদি বাড়তি স্ট্রেস থাকে বা দিনের পর দিন রাতে ঘুম না হয়, তা হলে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যহানি হবে তাড়াতাড়ি। সবার আগে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন – ব্যায়াম এবং মেডিটেশন এ ক্ষেত্রে ভালো কাজে দিতে পারে।