মানসিক চাপ বা স্ট্রেস মানুষের আজকের সঙ্গী নয় – বহু হাজার বছর ধরে তা লগ্ন হয়ে আছে আমাদের সভ্যতার সঙ্গে। আগেও মানুষ শিকারে যেত খাবার সংগ্রহ করতে। রোজ তো আর তা জুটত না, বনজঙ্গল থেকে ফল-পাকুড়, কন্দ জোগাড় করে আনতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হত। তার পর সেই খাবার গ্রহণ করার পর শরীর আর মন দুইই তৃপ্তি পেত।
এখন আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, সেখানে খাবার হচ্ছে বিলাসিতার নামান্তর। অজস্র সুস্বাদু ভোজ্য ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের চারপাশে। কিন্তু এখনও সেই ফেলে আসা দিনের মতোই স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে আমরা খেতে আরম্ভ করি। তাতে মুড ভালো হয়।
একথা প্রমাণিত যে মিষ্টি, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরে প্রবেশ করলে বাড়ে ডোপামাইনের ক্ষরণ। এই বিশেষ নিউরোট্রান্সমিটার মানুষের মন ভালো রাখে। তাই অধিকাংশের ‘কমফর্ট ফুড’ই ঘি-ভাত, ন্যুডলস, পাস্তা, চিজ, ভাজাভুজি, চকোলেট, আইসক্রিম, মিষ্টির মধ্যেই ঘোরাফেরা করে।
তবে কমফর্ট ফুডের সঙ্গে ছেলেবেলার যোগটাও খুব গভীর। ছেলেবেলার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে এমন সব খাবারও আমরা খেতে পছন্দ করি – তাতেও মনে একটা নির্ভার, নিশ্চিন্ত আবেশ জাগে। কিন্তু সব কিছুর মতোই এরও একটা সমস্যার দিক আছে।
মানসিক চাপ এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে অতিমারির দাপটে বেঁচে থাকাটাই যে প্রাথমিক চাহিদা, সেটা আমরা নতুন করে বুঝতে আরম্ভ করেছি। সেই সঙ্গে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পেশাদারি জীবন নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে বেড়েছে কমফর্ট ফুডের চাহিদাও। আপনি জানেন লকডাউন হলেও চাপ নেই, ফুড ডেলিভারি অ্যাপ থাকলেই আপনার পছন্দের খাবার এসে যাবে হাতের মুঠোয়।
তার ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ঘরবন্দি অবস্থায় সবারই ওজন বাড়ছে, সেই সঙ্গে হাজির হচ্ছে নানা হরমোন ও বিপাকজনিত সমস্যা। নেহাত বাধ্য না হলে এখন কেউই ডাক্তারের শরণ নিচ্ছেন না, ফলে সমস্যা আরও ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে।
মনে রাখবেন, আপনার শরীর যতটা ক্যালোরি খরচ করে রোজের কাজে, তার চেয়ে বেশি খাবারের মাধ্যমে ভিতরে গেলেই তা জমা থাকবে ফ্যাট হিসেবে। যদি আপনি বেশি মিষ্টি বা ভাজাভুজি খেয়ে নেন, তা হলে রক্তে চিনির মাত্রাধিক্য হবে। আর ব্লাড সুগার কিন্তু অনেকটা না বেড়ে গেলে ধরা পড়ে না। আর একবার ধরা পড়লে কিন্তু অজস্র বিধিনিষেধ মানতে হবে।
তাই কমফর্ট ফুডের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন না। যদি মনে হয় মুড খুব খারাপ, একটা পেস্ট্রি বা চকোলেট কেক খেতে হবেই, তা হলে ছাতে অন্তত এক ঘণ্টা হেঁটে আসুন আগে। ব্যায়াম করলে সেরোটনিন ক্ষরণ হয়, তা মুড ভালো রাখে। আর তার পরেও যদি খাবার ইচ্ছে থাকে, তা হলে অল্প একটু খান। মনের শান্তি, জিভের স্বাদ দুই-ই বজায় থাকবে, শরীরও খারাপ হবে না।
হাতের কাছে বাদাম, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদি রাখুন। ফল খান নিয়ম করে, মিষ্টি ফল খেতে পারলে সুগার ক্রেভিংও কমবে। মুড ভালো করতে গিয়ে ওবেসিটিকে ডেকে আনার কোনও মানে হয়, বলুন তো?