শীতের সকালে তো কম্বল ছাড়তে ইচ্ছেই করে না, বরং আলো মরে আসা দুপুরের দিকেও একটু ঝিমিয়ে নিতে ইচ্ছে করে – তাই না? অনেকেই বিকেলে অফিস সেরে ফেরার পর হাঁটতে যান গরমকালে, ঠান্ডা পড়লে সে উৎসাহেও যেন এক গলা জল ঢেলে দেয় কেউ! তবে আপনার আলসেমির জন্যই কিন্তু এমনটা হচ্ছে না – তাই বেকার নিজেকে দোষ দেবেন না!
মানুষের যে কোনও শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডই চলে একটি বিশেষ নিয়ম মেনে, তার পারিভাষিক নাম হচ্ছে সারকাডিয়ান রিদম। এর অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয় সূর্যের আলোর দ্বারা। আমাদের শরীর থেকে রাতের বেলা মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন বেরোয়, তার কাজ হচ্ছে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া। শীতকালে যেহেতু বেলা ছোটো, সন্ধে নামে তাড়াতাড়ি, তাই শরীরে বেশি বেশি মেলাটোনিন তৈরি হয়। তাই ঘুমও পায় বেশি।
ধরুন আপনার বরাবর সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস। এখন তো ছটায় ভালো করে রোদই ওঠে না, ফলে আপনার শরীরেও চনমনে ভাব জাগে না। লক্ষ্য করে দেখবেন, যে সব দিন একটু মেঘে ঢাকা থাকে সেই দিনগুলোতে বেশি অসুবিধে হয়, মন খারাপ লাগে। এর থেকে বাঁচার রাস্তা একটাই – মাঝে মাঝে ঘরের বাইরে যাওয়া, একটু হাঁটাচলা করা। অনেক দূর যেতে হবে না, যেখানে প্রাকৃতিক আলো আসে, তেমন কোনও বারান্দা বা ছাদে গেলেও চলবে।
শীত লাগছে বলে অতিরিক্ত গরম পোশাক চাপানোর অভ্যেস আছে আপনার? তাতে হয় কী, শরীরের ভিতরের তাপমান বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁরা রাত্তিরে সোয়েটার চাপিয়ে ঘুমোতে যান, তাঁদের শরীর গরম হয়ে গিয়ে রাতে বার বার ঘুম ভাঙতে পারে। রাতে ভালো ঘুম না হলে কিন্তু সারা দিন গা ম্যাজম্যাজ করবে, ঘুমভাব জড়িয়ে ধরবে।
শীতের দিনে জমিয়ে তেল মশলাদার ভারী খাবার খাওয়ার রীতি আছে, নানা পার্টি বা নেমন্তন্নের অনুষ্ঠানেও যেতে হয়। রাতে খুব ভারী খাবার, বিশেষ করে একগাদা কার্বোহাইড্রেট খেয়ে ফেলবেন না। অতিরিক্ত খাবার হজম করার জন্য শরীরকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। রাতের দিকে তেমনটা হলে আপনার ভালো ঘুম হবে না, বদ হজমের সমস্যাও হতে পারে। ফলে সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব থাকবে। বাড়তি মদ্যপানের কারণেও এমনটা হতে পারে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে চাইলে কী করা উচিত?
. রোজ দিনের বেলা বা বিকেলের দিকে খানিকটা সময় বাইরের খোলা হাওয়া ও আলো গায়ে লাগান। তাতে চনমনে লাগবে। পারলে এই সময়টায় ব্যায়াম করে নিন।
. শীতকালে ওজন বাড়ে অতিরিক্ত খাবার ও মদ্যপানের কারণে। তাই মাত্রাছাড়া খানা-পিনা করবেন নয়া, একান্ত করলেও ব্যায়াম করুন। মরশুমি ফল আর সবজি খান বেশি করে।
. রাশ টানুন মিষ্টি খাওয়ায়। হ্যাঁ, শীতকালে শরীরের একটু বাড়তি উত্তাপ লাগে, আর মিষ্টি সেই তাপের সহজ উৎস। কিন্তু বেশি মোয়া, পাটালি, পায়েস, পিঠে খেলে শ্রীরের তাপ বেড়ে যাবে। একান্ত খেলেও সকালের দিকে খান, তাতে খুব বেশি ক্ষতি নেই।