এই কঠিন পরিস্থিতিতে অসহায় বয়স্ক মা-বাবা বা শ্বশুর-শাশুড়িকে একলা রেখে যাঁদের দূর শহরে বা অন্য মুলুকে থাকতে হচ্ছে, তাঁরাই জানেন কতটা দুশ্চিন্তা হয়। যাঁরা এক শহরে আলাদা বাড়িতে থাকেন, তাঁরাই কি আর খুব ভালো আছেন? বাইরে ভয়ানক ভাইরাস তান্ডব শুরু করেছে, সেই সঙ্গে আছে আর্থিক সমস্যা, আতঙ্কের সঙ্গে লড়াই। চাইলেও আপনি তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেন না সব সময় – এ অবস্থায় কি কারও ভালো লাগে?
তাই কিছু রুটিন তৈরি করে নিন – তাতে তাঁদের এবং আপনার সুবিধে হবে। নিয়মিত যোগাযোগ তো রাখতেই হবে, পারলে স্থানীয় কোনও কেয়ারগিভার এজেন্সিকেও নিয়োগ করতে পারেন। ওঁদের সঙ্গে কি দেখাশোনার জন্য কেউ থাকেন? তাঁকে পূর্ণ সময়ের জন্য বহাল করুন আপাতত কয়েক মাস। বাইরে থেকে রোজ কেউ যাওয়া-আসা না করাই ভালো।
ইমোশনাল কানেকশনটা যেন থাকে, তা দেখবেন। ফোন, মেসেজ, ভিডিও কল – যোগাযোগ রাখার অজস্র উপায় আছে। মা-বাবার কাছ থেকে নানা বিষয়ে পরামর্শ নিন, গুরুত্ব দিন তাঁদের মতামতকে। এটুকু সম্মানেই ওঁদের মন ভালো হয়ে যায়। মন ভালো রাখাটা খুব জরুরি, না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
টেকনোলজির কল্যাণে এখন অনেক কিছু সম্ভব – ওনাদের খাবার সময় ভিডিও কল করে দেখুন কী খাচ্ছেন। আলাদা বাড়িতে/ শহরে/ দেশে থাকলেও একসঙ্গে খেতে বসতে তো কোনও অসুবিধে নেই?
ওঁদের বাইরে যেন বেরোতে না হয়, তা নিশ্চিত করুন। অনলাইন টাকা লেনদেন করার অভ্যেস থাকলে ভালো, না হলে শিখিয়ে দিন। প্রয়োজনীয় ওষুধ, বাজারদোকানও করা উচিত অনলাইনেই – তার পর তা ঠিকমতো স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে দেখুন, ওঁরা যেখানে থাকেন, তার আশপাশে কোনও না কোনও ফুড ডেলিভারি সংস্থা আছেই। অনেকেই আজকাল একেবারে ঘরোয়া রান্না তৈরি করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে, তেমন কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে – তাতে রোজের পরিশ্রম কমবে।
সমস্ত অনলাইন লেনদেন মনিটর করুন – বয়স্ক মানুষের সঙ্গে তঞ্চকতা করেই এক শ্রেণির পেট চলে। বুড়ো বয়সে ঠকে গেলে অনেকে দারুণ মনোকষ্টে ভোগেন। কোনওভাবেই ডিপ্রেশন সেট করতে দেবেন না।
স্থানীয় কোনও বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে রাখুন – হাসপাতাল বা অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে যেন পাশে এসে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকে। মনের জোর বজায় থাকলেই কিন্তু এঁরা ভালো থাকেন। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিন দূরে থাকলেও আপনি পাশেই আছেন – এই কঠিন সময়ে বয়স্ক মানুষদের এইটুকু সাহায্যেরই প্রয়োজন!