রাত হলেই আতঙ্কে ভুগতে থাকেন ২৫ বছরের সদ্যবিবাহিতা তরুণী শ্রীতমা। পাঁচ বছর একটানা সম্পর্কে থাকার পরেও শারীরিক ঘনিষ্ঠতার কথা ভাবলেই আড়ষ্ট হয়ে যান ৩২ বছরের রোহিণী। শারীরিক সমস্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মিলনের কথা ভাবতেও পারেন না মধ্যচল্লিশের সুলগ্না। এঁদের তিনজনের একটাই সমস্যা। শারীরিক মিলন ওঁদের কাছে আনন্দের নয়, বরং অসহ্য যন্ত্রণার। স্বাভাবিক শারীরিক উত্তেজনা বা কৃত্রিম লুব্রিকেশন, কোনও কিছুই সে যন্ত্রণা কমাতে পারে না। অথচ ডাক্তারি পরীক্ষায় তিনজনেই শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সক্ষম, কোনও সমস্যাই নেই তাঁদের!
শ্রীতমা, রোহিণী, সুলগ্না, এগুলো তিনটে নাম। বাস্তবটা হল, এমন অসংখ্য মেয়ে আছেন যাঁরা শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ও পারঙ্গম হওয়া সত্ত্বেও শরীরী মিলন তাঁদের কাছে একটা বিরাট সমস্যার জায়গা। পেনিট্রেটিভ সেক্স তাঁদের কাছে এতটাই যন্ত্রণাদায়ক হয় যে কোনও মতেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শুধু পেনিট্রেটিভ সেক্সই নয়, যোনিপথে ট্যাম্পনের মতো কোনও কিছু ঢোকাতেও তাঁরা অসম্ভব যন্ত্রণাবোধ করেন। এমনকী, পরিস্থিতি এতটাই জটিল হতে পারে অনেক সময় যে, যোনির আশপাশের অঞ্চলে হাত ছোঁয়ালেও যন্ত্রণা হয়, ফলে পেনিট্রেশনের প্রশ্নই ওঠে না! ডাক্তারি পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় ভ্যাজিনিসমাস।
ভ্যাজিনিসমাস এমন একটা সমস্যা যা যে কোনও মেয়ের কাছেই চূড়ান্ত অস্বস্তিকর। দিনের পর দিন এমন চলতে থাকলে মানসিকভাবেও তাঁদের ভেঙে পড়া স্বাভাবিক। আর এর জের অবধারিতভাবেই গিয়ে পড়ে সম্পর্কের ওপর। পুরুষসঙ্গী যদি সহানুভূতির সঙ্গে ব্যাপারটা না দেখেন, তা হলে যৌথজীবন ভেঙে যাওয়াও আশ্চর্যের নয়।
এই সমস্যায় পেনিট্রেশনের উপক্রম হলেই যোনির পেশিগুলো এমনভাবে সংকুচিত হয়ে যায় যে যৌনমিলন সম্ভব হয় না, বা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। সম্পর্ক সুখের না হলে ভ্যাজিনিসমাসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় পুরোনো কোনও মানসিক আঘাতের মধ্যেও ভ্যাজিনিসমাসের রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার অনেক সময় মেনোপজের পর মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলে যোনিপথের স্বাভাবিক পিচ্ছিলতা কমে যায়, ফলে ইন্টারকোর্সে সমস্যা হয়।
ভ্যাজিনিসমাসের সেই অর্থে কোনও চিকিৎসা নেই, কারণ এটি কোনও শারীরিক রোগ নয়। তবে ইন্টারকোর্স সম্ভব হয় না বলে একসময় তার প্রভাব মেয়েদের যৌন ইচ্ছের ওপরেও পড়তে পারে। যদি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বা লুব্রিকেশন ঠিক থাকে, তা হলে সেক্স থেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাজিনিসমাসের চিকিৎসা করানো যেতে পারে। বিশেষ থেরাপির অঙ্গ হিসেবে ভ্যাজাইনাল ডাইলেটরের মতো যন্ত্র দিয়ে যোনির পেশিকে নমনীয় করানো হয়। তা ছাড়া মন শান্ত রাখা, উত্তেজনা এড়ানো, আতঙ্ককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখানোও ভ্যাজিনিসমাস চিকিৎসার জরুরি দিক।
এ ক্ষেত্রে নিজেকেও কিছুটা দায়িত্ব নিতে হবে। লজ্জায় গুটিয়ে না থেকে সমস্যার কথা স্বামী বা পার্টনারকে খুলে বলুন। যৌন মিলন নিয়ে আপনার মনের কোথাও যদি আতঙ্ক থাকে, তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বললে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে। অনেক সময় কৃত্রিম লুব্রিকেশন ব্যবহার করলে বা সেক্স পজিশন পালটে ফেললে ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। মন খোলা রাখুন, মনের জোর ধরে রাখুন। পাশাপাশি মনে রাখবেন কাউন্সেলিং আর থেরাপির মাধ্যমে অনেক মেয়েই ভ্যাজিনিসমাস কাটিয়ে উঠেছেন। ফলে একদম সমস্যার মূলে পৌঁছোতে চেষ্টা করুন, জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর!