ছেলেদের আমরা বড্ড বদনাম করি – টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি, মেল শভিনিজমের মতো ভারী ভারী কথার ভার তাদের বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন। কিন্তু ছেলেদের সঠিক শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা যদি না পরিবারের মেয়েরা একেবারে গোড়া থেকে নেন, তা হলে এই চক্রটা ভাঙা যাবে না। তাই আপনার ভাই, বন্ধু, সন্তান বা যে কোনও পুরুষ সদস্যকে কয়েকটি অভ্যেস করান – তাতে সে সমাজে প্রচলিত নিয়মের বাইরে বেরোতে পারবে।
. নারী-পুরুষের মধ্যে বিভেদ করার দরকার নেই। মেয়েরা অনেক কিছু পারে না, ছেলেরাও বেশ কিছু ব্যাপার বোঝে না। আবার চেষ্টা করলে যে কেউ যে কোনওটা করতে পারে। তাই বাড়িতে ‘এটা ছেলেদের কাজ নয়’ বা ‘ওই কাজটা মেয়ে ছাড়া হবে না’ গোছের নিয়ম তৈরি করবেন না। ছেলেরা আনাজ কাটতে বা কাপড় গোছাতে পারবে, মেয়েরা মাটি কোপাতে বা টাকা রোজগার করতে পিছুপা হবে না – এমন পরিবেশ গড়ে তুলুন।
. আশপাশের সবার খেয়াল রাখতে হবে। মেয়ে, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ, বাচ্চা-বুড়ো, গাছ-পাখি-কুকুর বিচার করলে চলবে না। জেন্ডার ব্যাপারটা কিন্তু আগের মতো আর স্রেফ স্ত্রী-পুরুষেই আটকে নেই। এখন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন ও সোচ্চার। তাই লিঙ্গ ভেদে কাউকে বিচার করার দরকার নেই – বন্ধু বা আত্মীয় তো বটেই, সবার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে হবে – এ অভ্যেস তৈরির উপর জোর দিন।
. বাচ্চা ছেলের হাতে ছোটো থেকে বন্দুক তুলে দেওয়ার অভ্যেসটা আগে বড়োদের ছাড়ার চেষ্টা করা উচিত। বন্দুক দিয়ে শিশু গুলি চালাচ্ছে আর বড়োরা মরে পড়ে যাচ্ছে – এ খেলার মধ্যে হিংসা আর বীভৎসতা লুকিয়ে থাকে। ছোটো থেকেই বাচ্চা মানুষ বা পশুপাখি মারতে বা গাছের ফুল-পাতা ছিঁড়তে শিখবে কেন বলুন তো? তার চাইতে বাগান করতে বা রাস্তার কুকুরকে খেতে দিতে শেখান। অভিভাবক যেভাবে বড়ো করে তুলবেন, শিশুর ব্যবহার ঠিক সেরকমটাই হবে – এটা খেয়াল রাখবেন।
. কোনও কাজকে ছোটো করবেন না। বাড়িতে মা-ঠাকুমারা যে কাজটা করেন সেটা যে বাবা-কাকার অফিসের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই বোধ সব বাচ্চার থাকা উচিত। ছোটো থেকেই শিশু দেখে বাবা টাকা আনেন, আর সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্রেফ টাকায় সংসার চলে না – মায়েরা সেই টাকা ব্যবহার করে পরিবারের সব সদস্যের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করেন। দুটোর পারফেক্ট ব্যালান্স না হলে সংসার চলে না।
. মেয়েদের ‘রক্ষা’ করতে হবে না, পাশাপাশি তাদের অস্বস্তি বা বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠারও দরকার নেই। একটি ছেলের পোশাক মেয়েদের যৌন চেতনাকে জাগিয়ে তোলে না, তুললেও তারা সেই তীব্র ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণে বেঁধে রাখতে পারে। ছেলেদেরও সেভাবেই গড়ে তুলুন। তা হলে খাটো পোশাক পরা বা অসহায়, একা কোনও মেয়েকে দেখলেই তাদের জান্তব প্রবৃত্তি জেগে উঠবে না।
. ‘না’ শব্দটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যে কেউ না বললেই সেটা সিরিয়াসলি নিতে হবে। বিশেষ করে কোনও মেয়েকে পছন্দ হলেই যে সে সাড়া দেবে, তা না-ও হতে পারে। সেটা মেনে নিতে হবে। না শুনে রাগ হলে চলবে না, অন্যদের অপছন্দটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।