দাম্পত্য কলহ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার – দু’জন মানুষ একসঙ্গে থাকতে গেলে মতের অমিল হবেই। কিন্তু সেটা যদি বাড়ির বাচ্চাদের সামনে হয়? একবার নয়, বার বার হতে থাকে? তা হলে আপনাদের একটু সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। তার আগে জেনে নিন কয়েকটি জরুরি বিষয়।
যে কোনও সন্তানের জীবনে সবচেয়ে বড়ো প্রভাব থাকে তার মাতা-পিতার। আপনি নিজেকে খুব ভালো করে লক্ষ করলেই সে কথা বুঝতে পারবেন। ওঁদের দেখেই গড়ে উঠেছে আপনার মূল্যবোধ, আপনার সন্তানের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হবে। সেই কারণেই একদল মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, বাচ্চার সামনে বাবা-মায়ের মধ্যে সুস্থ তর্ক-বিতর্ক হলে অসুবিধের কিছু নেই।
বরং তারা বুঝতে শিখবে যে একসঙ্গে থাকতে গেলে মতের অমিল হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু সেটাই আঁকড়ে বসে থাকে না কেউ। আলোচনা করতে হয়, তর্ক হতে পারে – তারপর একটা জায়গায় এসে দু’জনকেই খানিকটা হলেও কম্প্রোমাইজ করতে হয়। তাতে কেউ বড়ো বা ছোটো বলে প্রমাণিত হয় না। কখনও আবার যাঁর কথায় যুক্তি বেশি, তাঁর মতটাই গ্রহণ করেন অন্যজন।
সুস্থ তর্কাতর্কি বা ঠেস দিয়ে দু’একটা কথা বলা, ঠাট্টা-তামাশা, মান-অভিমান যে সুস্থ দাম্পত্যের অংশ তা জানবে আপনার সন্তান এবং পরবর্তীকালে কোনও বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে মতান্তর হলে একেবারে মুখ ঘুরিয়ে নেবে না। ঝগড়াই শেষ কথা নয়, তার পরেও ভালোবাসা থাকে – সেটা বোঝার এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না।
কিন্তু যদি দেখেন যে আপনাদের ঝগড়া সাধারণ দাম্পত্য কলহের চেয়ে আলাদা এবং তা প্রায়ই ভায়োলেন্ট হয়ে উঠছে – তা হলে কিন্তু সন্তানের মুখ চেয়েই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাপল কাউন্সেলিং করান। অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্য কলহের মূল কারণ হয়ে ওঠে অবিশ্বাস – মা বা বাবা অন্য কাউকে ভালোবাসেন বলে পরিবারে অশান্তি হচ্ছে বুঝতে পারলে বাচ্চা ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়ে, তার মনে দানা বাঁধে ঘৃণা, সন্দেহ, অস্থিরতা। পরিবারের মধ্যে সে নিরাপত্তার অভাববোধ করে। এর ফলে ব্যাহত হয় তার মানসিক বিকাশ।
আপনাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলেই কি সন্তান কান্নাকাটি আরম্ভ করে দেয়? ভয় পায়? রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে? কোনও একজন অভিভাবকের প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাত গড়ে উঠছে? তা হলে বুঝতে হবে সে মানসিক দোলাচলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি এড়াতে চাইলে কাউন্সেলিং করান বা দু’জনে বসে সিদ্ধান্ত নিন কী করা উচিত।
বাচ্চার সামনে ঝগড়া হলে কখনও পরস্পরকে গালিগালাজ বা মারধোর করবেন না, একে-অপরের পরিবার নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িও করা উচিত নয়। এমন কোনও প্রসঙ্গ তুলবেন না যা অনৈতিক বা অশ্লীল। সন্তানের দায়িত্ব নেওয়াটা কিন্তু নেহাত ছেলেখেলার বিষয় নয়, প্রতি পদে তা খেয়াল রাখবেন। তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, আপনাদের মতের অমিল হলে সন্তানকে কোনও একটি পক্ষ বেছে নিতে বলবেন না প্লিজ – তার চেয়ে খারাপ শিক্ষা আর হয় না!