খবরের কাগজ, টিভি, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ – কোনও কিছুর দিকেই চোখ রাখতে ইচ্ছে যাচ্ছে না তো? স্বাভাবিক। একদিকে ভয়াবহ অতিমারির সঙ্গে সারাক্ষণ লড়াই চালানো সাধারণ মানুষের হাহাকার, অন্যদিকে নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা – মানসিক শান্তি ঠিক রাখাটাই এখন সব চাইতে কঠিন কাজ!
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো আছে রাজনৈতিক দলাদলি, নিজেদের একেবারে প্রাথমিক অধিকারগুলিও যে সুরক্ষিত নয় আর, তা বেশ বুঝতে পারছে মানুষ। কিন্তু এখনও অনেক লড়াই বাকি, ভেঙে পড়বেন না। আমরা আপনাকে এমন কয়েকটি পথ বাতলে দিতে পারি যা মেনে চললে মন খারাপ কমবে।
১. সকালবেলায় খবরের দিকে চোখ রাখবেন না
হ্যাঁ, সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই চারপাশে কী ঘটছে, সেদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়াটা আমাদের অনেকদিনের অভ্যেস। অনেকে আবার আজকাল চোখ খুলেই একবার সোশাল মিডিয়ার পাতায় চোখ রাখেন। কিন্তু সেখানে হিংসা আর অসহায়তার খবর দেখে কি আপনার মন সকাল থেকে ভার হয়ে যাচ্ছে? তা হলে এই অভ্যেস বদলান। দিনের কাজ শুরু করে দেওয়ার পর খবর দেখলেও চলবে!
২. দিন শুরু করুন পজিটিভ কোনও কাজ দিয়ে
আপনার কি কোনও পোষ্য আছে? কুকুর, বেড়াল, মাছ, পাখি থাকলে তাদের সঙ্গে খানিক সময় কাটান, দেখভাল করুন। একান্ত কিছুই রাখা সম্ভব না হলে পাতাবাহার গাছ কিনে আনতে পারেন – সেটা ঘরে বা জানলার পাশে রাখলেই দিব্যি থাকবে। সকালে উঠে তাতে জল দিন, ছোট্টো স্প্রে বোতলে জল ভরে পাতা ধুয়ে দিন মাঝে মাঝে। চায়ের পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে গাছের গোড়ায় দিন মাসে একবার। একটা গাছ বড়ো করার মধ্যেও দারুণ পজিটিভ এনার্জি আছে।
৩. ব্যায়াম করুন
সকাল বা বিকেলের হালকা রোদ গায়ে লাগিয়ে একটু হাঁটাচলা করুন রোজ। ভিটামিন ডি আর খোলা বাতাসের অভাবেও কিন্তু মন খারাপের সমস্যা বাড়ে। সকাল সাতটার আগে আধ ঘণ্টাও যদি বরাদ্দ করতে পারেন নিজের জন্য, তা হলে খুব ভালো হয়। এই সময়ে গায়ে সানস্ক্রিন লাগাবেন না। ব্যায়াম করলে আপনার মন ভালো থাকবে, এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হওয়া যায়।
৪. কাউকে সাহায্য করুন
আপনার আশে পাশে বহু মানুষকে কষ্ট পেতে দেখছেন বলে মন খারাপ? সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন কারও দিকে – দেখবেন, মন আপনিই ভালো হয়ে যাবে। বয়স্ক কোনও প্রতিবেশীর বাজার-দোকান করে দিন, রাস্তায় থাকা কয়েকটা কুকুরের দুপুর বা রাতের খাবারের ব্যবস্থা করুন, পাখিদের খাওয়ার জন্য জল রাখুন জানলার বাইরে, ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকারের বাচ্চাটাকে পড়াতে পারেন, ঘরের কাজে যিনি সাহায্য করেন তাঁর রেশনের দায়িত্ব নিন – দেখবেন, আপনার জীবনটাই বদলে গিয়েছে আগাগোড়া!
৫. আশপাশের মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখুন
বাড়ির সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখুন, কথা বলুন। যে যার নিজের মোবাইলে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকবেন না – একসঙ্গে বসে সিনেমা বা খেলা দেখুন, দিনের একটা মিল সবাই বসে খান, গল্প করুন, যাঁরা দূরে আছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ৭৫ বছর ধরে ৭২৪ জন মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে সব মানুষের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়-বন্ধুদের সম্পর্ক ভালো, তাঁরা সুস্থ আর সুখি জীবন যাপন করেন।
মনে রাখবেন যে, অতিমারি কবে শেষ হবে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। আরও অনেকদিন আমাদের বাড়িতেই আটকে থাকতে হবে হয়তো। তা নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই, বরং পরিস্থিতি নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসুন। ভালো খাবার খান, সুস্থ থাকুন সকলকে নিয়ে।