গত শতকের আটের দশক থেকে সারা দুনিয়ায় ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল এইচআইভি ভাইরাসের কারণে হওয়া এইডস নামক অসুখটি। রোগটি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না গোড়ায়, তার পর তা ধরা পড়তেও দেরি হত। তাই একটা সময়ে হু হু করে ছড়াচ্ছিল এইডস – তা মহামারি বা এপিডেমিকের তকমা পায়।
ভারতে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান মেলে ১৯৮৬ সালে, তামিলনাড়ুর এক যৌনকর্মী এই রোগের শিকার হন। ধীরে ধীরে দেখা যায় দক্ষিণ ভারতের অন্য কয়েকটি রাজ্য – অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, এবং উত্তর-পূর্বের দু’টি রাজ্য নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের মহিলা যৌনকর্মীদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে ক্রমশ। মহিলা যৌনকর্মী, সমকামী পুরুষ ও একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে যাঁরা ড্রাগস নেন, তাঁদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল সবচাইতে বেশি, তাঁদের মাধ্যমে আরও বহু মানুষ সংক্রমিত হতে পারতেন।
কিন্তু কার্যত দেখা গেল যে খুব সাফল্যের সঙ্গে এ দেশে এইডস রুখে দেওয়া গেল। কীভাবে সম্ভব হল সেটা? বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ‘সামাজিক টিকাকরণ’ দিয়ে। হাই রিস্ক গ্রুপ তো বটেই, সমাজের সব স্তরে এইডস সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হল। আটের দশকে যাঁরা স্কুলে পড়েছেন, তাঁরা জানেন, স্কুলে স্কুলে যৌনশিক্ষার ক্লাস চালু হয়।
আলোচনা ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুরক্ষিত যৌনতা ও একগামিতার সুবিধের দিকগুলি তুলে ধরা হয় সমাজের সব স্তরে, সেই সঙ্গে চলতে থাকে এইডস রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজও। ‘ব্যারিয়ার মেথড’ (কন্ডোম এই পদ্ধতির উদাহরণ) ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে বহু শিবির আয়োজিত হয় যৌনপল্লিতে। আর এ সবেরই মিলিত ফলে এইডস কখনওই রোগ হিসেবে বিরাট আকার নেয়নি এদেশে। সাধারণ মানুষ খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিল সোশাল ভ্যাকসিনেশনের বিষয়টি, সেই কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।
কোভিডের ক্ষেত্রে ঠিক এই জায়গাটাতেই পিছিয়ে পড়েছি আমরা – এ দেশের সাধারণ নাগরিক। গত শতকের আটের দশকের চেয়ে এখন আমাদের সবার হাতে অনেক বেশি ইনফরমেশন আছে, দিন-রাতের যে কোনও সময়ে, যে কোনও জায়গা থেকে আমরা তথ্য জোগাড় করতে পারছি। কিন্তু তা কাজে লাগাচ্ছি কি? বিধিনিষেধ উঠলেই বেড়াতে যাবো বলে যাঁরা তাল ঠুকছেন, পাড়ার মোড়ে বারণ সত্ত্বেও জটলা পাকাচ্ছেন – দেখা যাচ্ছে যে তাঁরাই মাস্ক পরা বা বাড়ি ফিরে ভালো করে হাত ধোয়ার ব্যাপারে সব চাইতে বেশি উদাসীন।
কোভিড ঠেকানোর উপায় আমার-আপনার সবার হাতেই আছে।
. আমাদের এখনও বেশ কিছুদিন প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া চলবে না।
. মাস্ক পরতে হবে, মানতে হবে সোশাল ডিসট্যান্সিং।
. ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
. সংক্রমণ একেবারে কমে গেলে বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যেতে পারেন, তবে অন্ততপক্ষে হাতখানেক দূরে বসবেন।
. কাশি বা হাঁচির সমস্যা হলে মানতে হবে নিয়ম, জ্বর এলে নিজেকে আইসোলেট করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। স্রেফ এটুকু করলেই যদি সংক্রমণ ঠেকানো যায়, সেটা করাই ভালো নয় কী?