বাবা-মা বা পরিবারের লোকেরা আপনার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতে ভালোই হবে – এ নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহই নেই! কিন্তু বিয়ে মানে দুই পরিবারের সম্পর্ক গড়ে ওঠা, এই ধারণা আঁকড়ে বসে থাকারও কোনও মানে হয় না। নিজের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার, আপনার নিজের এ সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে কিনা, সেটা ভেবে দেখাও জরুরি।
অনেকেই বলেন, সম্বন্ধ করে বিয়ের পরেও বহু মানুষ সুখি জীবনযাপন করেন, ডিভোর্সের হার অনেক কম। সব ঠিক হলে তো ভালোই, কিন্তু সাম্প্রতিককালের ঘটনাক্রম দেখলে একটু চিন্তাভাবনা করাও প্রয়োজন।
বাবা-মা প্রচুর খরচপত্র করে বিয়ে দিলেন দেখেশুনে, কিন্তু তার পর মনের মিল হল না। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে দেখা গেল সম্পর্কে বিরাট বড়ো ফাঁক আছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হল মেয়ের মৃতদেহ — এমন ঘটনার কথা তো খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে!
অবশ্য ছেলেদের ক্ষেত্রেও মানিয়ে না নেওয়ার সমস্যাটা হতেই পারে – তবে যেহেতু তাঁরা নিজেদের বাড়িতে কাছের মানুষের সঙ্গে থাকেন, তাই যুঝে চলাটা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। আর ছেলেরা বাড়ির বাইরে বেরোন, তাঁদের কাজ-কর্ম-অবসর-বন্ধুবান্ধব মিলিয়ে জীবনটাই একেবারে অন্যরকম হয়। স্রেফ সম্পর্ক আঁকড়ে বসে থাকলে তাঁদের চলে না।
আমাদের বক্তব্য, যাঁরা সম্বন্ধ করে বিয়ে করছেন, তাঁরা একটু বুঝেশুনে পা ফেলুন। দুই পরিবার, সামাজিক সম্মান, দেনাপাওনা – কোনও কিছু না ভেবে আগে যাঁর সঙ্গে জীবন কাটানোর কথা ভাবছেন তাঁর উপর মনোযোগ দিন। সত্যিই আপনাদের মনের মিল হবে তো? পরস্পরের জীবনবোধের সংঘাত বাধবে না তো?
আর একটা বড়ো প্রশ্নচিহ্ন থাকে শারীরিক তালমেল নিয়ে। আমাদের ভারতীয় সমাজ এখনও যৌনতা নিয়ে অত্যন্ত রক্ষণশীল, কিন্তু শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলতে আমাদের একটুও বাধে না। যাঁদের মাথাজোড়া টাক বা বড়ো ভুঁড়ি আছে বা যে মেয়ের গায়ের রং কালো অথবা দাঁত উঁচু – তাঁরা যে কী হেনস্থার শিকার হন সর্বক্ষেত্রে, তা নিয়ে কথা বলতে বসলে মহাভারত রচনা হয়ে যাবে!
সম্বন্ধ করে বিয়ে করলে সেক্সুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি যাচাই করার সুযোগ সত্যিই নেই, তাই বিরাট একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। যাঁদের নিয়মিত যৌনজীবন নেই, তাঁরা প্রথমদিকে একটু অস্বস্তিতে ভুগবেন – কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক যৌনতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ার কথা। তা না হলে কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন, যৌনতা কিন্তু সুস্থ সম্পর্কের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
সুস্থ দাম্পত্যে স্বামী-স্ত্রীর নিজের নিজের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। সংসারের খরচ কীভাবে সামলানো হবে, কোন খাতে কত বরাদ্দ হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সময় থাকতেই। এ সব কথা পরে উঠলেই দেখবেন ঝামেলা হচ্ছে।
আধুনিক যুগে দেনা-পাওনার ভিত্তিতে কোনও সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। যদি কোনও পরিবার অর্থের বিনিময়ে আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তা হলে এগোবেন কিনা ভেবে দেখুন। সাধারণত এ ধরনের চাহিদা কখনও ফুরোয় না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তেই থাকে। পরিণতিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুঃখজনক হয়। তাই যা করবেন ভেবে করুন। বিয়েতে ইনভেস্ট করার চেয়ে কেরিয়ারে টাকা লাগানো কিন্তু ভালো অপশন।
যেহেতু পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে তেমন না চিনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, তাই তাঁদের মধ্যে বিশ্বাসের বন্ধন গড়ে উঠতেও সময় লাগে। কিন্তু তাই বলে ছোটো ছোটো বিষয়ে সন্দেহ করবেন না। বিশেষ করে পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে। আপনি আসার আগেও তাঁর জীবনে নানা মানুষ ছিলেন, আগামী দিনেও থাকবেন। রাতারাতি আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারবেন না, একটু সময় নিন। আবার যদি কেউ আপনাকে খুব হেলাফেলা করে, তা হলেও প্রতিবাদ করুন।
মন থেকে গাঁটছড়া বাঁধার ইচ্ছে না হলে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন না। কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার তাগিদ থাকলে নিজের জোরে তা করুন – অন্য একটা জীবনকে সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়ার মানেই হয় না। বিয়ে মানেই নানা দায়িত্ব – ভবিষ্যতের কথা ভেবে তবেই এগোন।
যদি মনে হয় সম্পর্ক টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না, তা হলে আগে সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলুন। আপনার অসুবিধে তাঁর জানা উচিত। তার পর পরিবারের সকলকেও জানাতে হবে। যদি মনে হয় হাঁফ ধরে যাচ্ছে, তা হলে বিরতি নিন। খানিকটা সময় দূরে থেকে বোঝার চেষ্টা করুন সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা। মনে রাখবেন, আপনার মানসিক শান্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহিত জীবনে তা না পেলে অন্যভাবে ভাবতে হবে, দরকারে ম্যারেজ কাউন্সেলারের সাহায্য নিন।