এক সময়ে কথায় ছিল ‘কুড়িতে বুড়ি’, আর এখন জীবন নাকি শুরুই হয় চল্লিশের পর! একদিক থেকে কথাটা ভুল নয়। চল্লিশের পর আপনি জীবনে অনেকটাই সেটলড, নিজের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে সচেতন, ফলে নিজের পছন্দমতো জীবন কেমনভাবে কাটাতে হবে সে ব্যাপারে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। কিন্তু অন্যদিকে চল্লিশের পর শরীরের কিছু বিশেষ পুষ্টির চাহিদা তৈরি হয়। সত্যি সত্যি জীবন উপভোগ করতে হলে সে সব চাহিদাও পূরণ করতে হবে। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ আর ঝলমলে থাকতে নজর রাখুন প্রতিদিনের ডায়েটে, আর চল্লিশ পেরোনোর পর অবশ্যই খাবারে রাখুন কিছু বিশেষ পুষ্টি উপাদান। আসুন দেখে নেওয়া যাক!
বি১২
শরীরের লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়াতে আর মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সুস্থ সতেজ রাখতে ভিটামিন বি১২-র ভূমিকা অপরিসীম। দুধ, দুধ থেকে তৈরি নানা খাবার, মুরগির মাংস, মাছ, ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে, কাজেই এ সব খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতেই হবে। যাঁরা নিরামিশাষী, তাঁদের কিন্তু ভিটামিন বি১২-র অভাব পূরণ করতে সাপ্লিমেন্ট খেতেই হবে! শরীরে ভিটামিন বি১২-র অভাব হলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, ডিপ্রেশনের মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই সচেতন থাকুন।
ভিটামিন ডি
সুস্থ মজবুত হাড়, ব্যথাবেদনার অনুভূতি কমাতে ভিটামিন ডি-এর ভূমিকার কথা অনেকেই জানেন। চল্লিশের পর মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে আসে, ফলে মেনোপজের পর হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থেকে ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃদরোগ, নানা ধরনের অটোইমিউন অসুখও দেখা দিতে পারে। প্রতিদিনের ডায়েট থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া কঠিন, তাই এ ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টের ওপর ভরসা রাখতেই হবে।
ক্যালসিয়াম
শুধু হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষাই নয়, শরীরে নানা কারণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেয়, ফলে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন এমন খাবার খান যাতে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। কম ফ্যাটের ডেয়ারিজাত খাবার, আমন্ড, কমলালেবু, বিন, সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাবেন। তবে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভালো, কারণ বাড়তি ক্যালসিয়াম কিডনি বা ধমনীতে জমে গিয়ে অন্য বিপত্তি দেখা দিতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে, অর্থাৎ খাবারদাবার থেকেই যতটা সম্ভব ক্যালসিয়াম পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট
চল্লিশের পর মুখে বয়সের দাগ পড়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক সময়ই এর পেছনে থাকে অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, স্ট্রেস, ধূমপান বা মদ্যপানের মতো কারণ। পরিবেশের দূষণও এর জন্য অনেকটাই দায়ী। আবার শরীরের কোষ বিভাজনের ফলে যে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয়, তা থেকেও মুখে বয়সের ছাপ পড়তে পারে। এই সমস্যা ঠেকাতে আপনার দরকার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, বিন জাতীয় খাবার খান। ডার্ক চকোলেটেও যথেষ্ট অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। তবে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সাপ্লিমেন্ট খাবেন না, তা থেকে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
মাল্টিভিটামিন
প্রতিদিন নিয়মিত সুষম খাবার খেলে আলাদা করে মাল্টিভিটামিন খাওয়ার দরকার পড়ে না। ফল, শাকসবজি, চাল বা গমের মতো দানাশস্য, ফ্যাট, ডেয়ারি নিয়মিত খেলেই আপনার সমস্ত ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। তবে যদি কোনও কারণে শরীর খাবার থেকে যথাযথ পুষ্টি না পায়, তবেই মাল্টিভিটামিনের প্রয়োজন। নিজে থেকে যে কোনও মাল্টিভিটামিন খাবেন না, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিন।
ওমেগা থ্রি
হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে আপনার শরীরের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দরকার। তৈলাক্ত মাছ, আখরোট জাতীয় বাদাম, ফ্ল্যাক্সিড, চিয়া সিডসে ওমেগা থ্রি পাবেন। হৃদরোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধে ওমেগা থ্রি-র ভূমিকা খুব বেশি।