ইনফ্লামেশন নিয়ে আমাদের সচেতনতা শুরু হয়েছে এই কিছুদিন হল। আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে আরম্ভ করেছি যে ইনফ্লামেশন থেকে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। তবে তার আগে জানতে হবে প্রদাহ বলতে ঠিক কী বোঝায়।
ধরুন আপনার হাত কেটে গেল – ব্যথা করবে তো? এই ব্যথাটা হচ্ছে ইনফ্লামেশন। জায়গাটা কিছুদিন ফুলে লাল হয়ে থাকবে, তা-ও ইনফ্লামেশনের কারণেই। এর মানে হচ্ছে সেখানে সারাইয়ের কাজ হচ্ছে। কখনও ভাইরাস আক্রমণ করলে জ্বর আসে, সেটাও প্রদাহ। শরীর তখন জীবাণুর সঙ্গে লড়ছে পুরোদমে। এগুলোকে বলে অ্যাকিউট ইনফ্লামেশন এবং তা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া।
সমস্যা হয় ক্রনিক ইনফ্লামেশন নিয়ে। মানে কোনও কারণে শরীরে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সারাক্ষণ তা টক্সিনের সঙ্গে লড়ছে – যেহেতু টক্সিন বেরোচ্ছে না, তাই কমছে না ইনফ্লামেশনও। কীভাবে বুঝবেন আপনার এ সমস্যা আছে? কয়েকটা সহজ লক্ষণ হচ্ছে ত্বকের র্যাশ, চুলকানি, বার বার পেটের সমস্যা, গায়ে বা হাতে-পায়ে ব্যথা। তবে এর সঙ্গে এটাও মনে রাখবেন যে এই সমস্যাগুলি কিন্তু অন্য কোনও অসুখের পূর্বলক্ষণও হতে পারে। তাই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে একবার আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
ক্রনিক ইনফ্লামেশন, বিশেষ করে যে সব ইনফ্লামেশনের প্রতিক্রিয়া খুব মৃদু — বেশিদিন পুষে রাখবেন না, কারণ তা ক্রমশ ব্লাড ভেসেল, আর্টারি, নার্ভ, ত্বক বা ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্ষতি করবে। তা থেকে আপনার হার্টের সমস্যা, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, নার্ভের সমস্যা, ডায়াবেটিস এমনকী কয়েক ধরনের ক্যানসার বা সোরিয়াসিস হতে পারে। যাঁরা ওবিস, বিশেষ করে পেটের চারপাশে ফ্যাটের আস্তরণ আছে, ধূম বা মদ্যপানের মতো কোনও নেশা আছে, তাঁরা ইনফ্লামেশনে ভোগেন বেশি।
ইনফ্লামেশন মাপার কিছু মার্কার হয়, তার অন্যতম সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন। যদি সেই মার্কারগুলি নিয়ে যে সব সমীক্ষা হয়েছে, তার উপর চোখ রাখেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন যে প্রদাহ কমাতে ডায়েট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছেলেবেলায় মা-মাসিরা বলতেন শরীর গরম হলে মৌরি-মেথি ভেজানো জল খেতে হয়, খালি পেটে জোয়ানের জল খেলে কখনও বদ হজম হয় না – এ কথাগুলো কিন্তু নেহাত মিথ্যে সংস্কার নয়। ভেজানো মশলার এসেনশিয়াল অয়েল সত্যিই কাজে দেয়। কিছু খাবার আছে, যাতে প্রদাহ বাড়ে। যেমন রেড মিট, প্রসেসড মিট, ভাজাভুজি, যে কোনও মিষ্টি, ময়দা, সাদা ভাত, নরম পানীয়।
ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে নানা ধরনের সবুজ শাকসবজি, কুমড়ো, গাজর, হলুদ ক্যাপসিকাম, ভুষিসমেত আটার রুটি, লাল চালের ভাত, চা, কফি, ওয়াইন আবার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে খুব। দেখা গিয়েছে ক্যারোটিনয়েড (গাজর, কুমড়ো), ফ্ল্যাভোনয়েড (চা, কফি), ভিটামিন বা ফাইবার ইনফ্ল্যামেশন কমাতে কার্যকর।
আপনি কী করবেন?
প্রদাহ থাক বা না থাক, স্বাস্থ্যকর জীবন কাটানোর উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিন। এমন ডায়েট বেছে নিন যা মেনে চলা সহজ। মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমান, বাড়ান ডাল-শাকসবজি। প্রসেসড খাবার ধীরে ধীরে কমাতে আরম্ভ করুন। স্থানীয় বাজারে যে ধরনের ফল-শাকসবজি মেলে, তা রাখুন রোজের খাদ্যতালিকায়। জল খান বেশি করে।