ধরুন আপনি ভুরু কুঁচকে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আছেন – তার মানে কি আপনি বিরক্ত? নাকি একাগ্র চিত্তে কিছু ভাবছেন? চিন দেশের কোনও বাসিন্দা এই অবস্থায় আপনাকে দেখলে আপনার মনের ভাব সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন? কীই বা ভাববেন আলাস্কায় বসবাসকারী একজন মানুষ?
এই সব বিষয় নিয়েই চমকপ্রদ এক গবেষণা হয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে, ইমোশন সায়েন্টিস্ট ডা. অ্যালান কোয়েনের তত্ত্বাবধানে। ১৪৪টি দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ৬ মিলিয়ন ভিডিয়ো, তা দেখানো হয়েছিল পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা মানুষজনকে। তার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায়।
গোটা দুনিয়াকে ১২টি জোনে ভাগ করে নানা শ্রেণীর মানুষকে এই ভিডিয়োগুলি দেখানো হয়। তার পর জানা গিয়েছে, অন্তত ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ একটি ভিডিয়ো দেখে প্রায় একরকম প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। ব্যাপারটা আরও একটু খোলসা করে বলা যাক। কোনও ভিডিয়ো মজার হলে তা দেখে বেশিরভাগ মানুষ হেসেছেন। আতসবাজির ভিডিয়ো দেখে অবাক হয়েছেন, খেলাধুলো বা গানবাজনার ভিডিয়োতে আনন্দ পেয়েছেন এবং সেটা প্রায় একই ধরনের অভিব্যক্তি হিসেবে ফুটে উঠেছে তাঁদের মুখে।
আরও জানা গিয়েছে, ভৌগোলিকভাবে যে সব দেশ কাছাকাছি, তাদের অভিব্যক্তির মধ্যেও মিল বেশি। মার্শাল আর্টের ভিডিয়ো যদি ভারতীয়, আরব, জাপানি, মিশরীয় এবং আমেরিকানকে দেখানো হয়, তা হলে প্রথম চারজনের প্রতিক্রিয়ায় উনিশ-বিশ পার্থক্য হবে। আমেরিকানও খুব আলাদাভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন না, যদিও ভৌগোলিকভাবে তাঁর বাসস্থান অনেকটা দূরে।
গবেষকদের ধারণা, এই মিলের কারণ দুটি। হয় মানুষ আবেগ প্রকাশের এই মেকানিজমটা নিয়ে জন্মেছে, না হলে তা মানবসমাজের মধ্যে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে শুরু হয়েছিল একটা সময়ে এবং সেই ট্র্যাডিশন আমরা আজও বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তাই সাব টাইটেল ছাড়াও ইতালীয় ফিল্ম দেখে বুঝতে পারেন কোরিয়ার বাসিন্দা।
আপাতত যা বোঝা গিয়েছে তা হল, হাসি, কান্না, রাগ, দুঃখ, অপমান, অবাক হওয়ার মতো ১৬টি ক্ষেত্রে মানুষের মনের ভাব মুখে একইভাবে ফুটে ওঠে – আফ্রিকা আর আন্টার্কটিকায় এই একটি বিষয়ে মিলে যায়। ধনী আর দরিদ্রে কোনও ফারাক থাকে না। জীবন ঘিরে আজ আমরা যতই উঁচু পাঁচিল তুলি না কেন, শুরুটা যে এক জায়গা থেকেই হয়েছিল, তা ভুললে চলবে কেমন করে?