এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে খারাপ আমরা সবাই আছি – কেউ কম, কেউ বেশি, এটুকুই ফারাক। যাঁদের পরিবারে করোনা ঢুকেছে, মারণ থাবা বসিয়েছে তাঁদের মানসিকচাপের কোনও তুলনা নেই। যাঁদের ক্ষেত্রে এখনও তা হয়নি, তাঁরা প্রহর গুনছেন – এই বুঝি হানা দিল, কেড়ে নিল কাছের কাউকে!
আর এই অসহনীয় অবস্থায় যাদের মানসিক চাপ সবচেয়ে বেশি, তারা হল বাড়ির বাচ্চারা। বাবা-মা, বড়োজোর দাদু-ঠাকুমা/দিদিমায় আটকে গিয়েছে যাদের জীবন। স্কুল নেই, বন্ধু নেই, খেলার সাথী নেই, মাঠ নেই – এই অবস্থায় শিশুদের নানা সমস্যা হচ্ছে। বড়োদের সেদিকে মাথা দেওয়ার অবসর নেই এখন – যখন টের পাবেন, তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে না তো?
. বাচ্চার নিরাপত্তার বোধ যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সেটা দেখতে হবে। শিশু বা কিশোর যেন কখনও নিজেকে অরক্ষিত না ভাবে। অনেক পরিবারেই বাবা-মা আর একটি বা দু’টি বাচ্চা ছাড়া কেউ নেই – বড়োদের অসুখ করলে শিশু তো ভয় পাবেই! এখন থেকেই সতর্ক হোন। আত্মীয়, কাছের বন্ধু, প্রতিবেশীর সাহায্য নিন। সত্যিই আপনার অসুখ করলে কে তার দায়িত্ব নেবে, কাকে সবার আগে ফোন করা উচিত – এ সব নিয়ে কথা বলুন। ভয় পাওয়ানোর দরকার নেই, আশ্বাস দিন।
. একটা কথা খুব সত্যি – আমরা সবাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। ছোটোদের এত বোঝার কথা নয়, কিন্তু আমরা বড়োরা তো বুঝতে পারছি পরিস্থিতিটা? তাই আর দেরি না করে চারপাশে তাকান এখনই। আপনার পাশের ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে বা বন্ধুর বাড়ি – সর্বত্র অজস্র এমন শিশু বা কিশোরকে দেখতে পাবেন। নিজেদের মধ্যে কথা বলুন, একটা কমিউনিটি তৈরি করুন। চার-পাঁচটি পরিবার এক হয়ে যেতে পারলেই বাচ্চাগুলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে – তারা জানবে মা বা বাবার শরীর খারাপ হলেও পাশে থাকার লোক আছে।
. বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন, তার সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারলে তো ভালোই হয়। সময় কাটান। কিশোর বয়স্ক সন্তানের মন বোঝাটা আরও জরুরি, কারণ অনিশ্চয়তা, অসহায়তা তার মধ্যে রাগের জন্ম দেবে। সেই রাগ থেকে যে কী হতে পারে তা আপনি আন্দাজও করতে পারছেন না!
. অনলাইন ক্লাসে সব ছাত্রছাত্রীরই কোনও না কোনও অসুবিধে হচ্ছে। আপনাকে বুঝতে হবে সমস্যাটা, তাকে লেখাপড়ায় সাহায্য করতে হবে। লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়া বা ক্লাসে বকুনি খাওয়াটাই অভ্যেস হয়ে গেলে মুশকিল। বাড়িতেই যখন আছেন, তখন ভালো নম্বর কীভাবে পেতে হয় সেটা শেখান।
. সন্তানকে বোঝাতে হবে, এই সমস্যা সাময়িক। পৃথিবী আসলে এক চমৎকার জায়গা!
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
. বাচ্চা খাচ্ছে না, কথা বলছে না, ভয় পাচ্ছে – যদি মনে হয় আপনি কাছে টেনে নিয়েও লাভ হচ্ছে না, তা হলে মনোবিদের সাহায্য নিন।
. সারাক্ষণ নিজের ঘরেই আছে, ভিডিয়ো গেমে আসক্ত। এর অর্থ আপনার সন্তান ভার্চুয়াল পৃথিবীর বাইরে বেরোতেই চাইছে না, বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছেই নেই তার! আজকালকার বেশিরভাগ জনপ্রিয় ভিডিয়ো গেম কিন্তু হিংসাকে আশ্রয় করেই তৈরি হয়। আজকের পৃথিবীতে এমনিতেই নৈরাশ্যের ছড়াছড়ি – তার উপর বাড়তি হিংসার ফল হতে পারে মারাত্মক।
. বিছানা ভিজিয়ে ফেলছে। এই সমস্যা হলেই আমরা বাচ্চাকে বকি, কিশোরবেলায় এমন সমস্যা শুরু হলে তো হেনস্থার চূড়ান্ত করা হয়। এগুলি কিন্তু তীব্র মানসিক চাপের লক্ষণ। দেরি করবেন না, মনোবিদের শরণাপন্ন হোন।
. আপনাকে একেবারেই ছাড়ছে না। বাচ্চার ধারণা, আপনার কাছ ছাড়া হলেই তার বিপদ হবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য তার চারপাশে সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে তুলুন।
. কোনও কাজে মন দিতে পারছে না। টানা মনঃসংযোগ করতে না পারলে সতর্ক হোন, কগনিটিভ স্কিল পাকাপাকি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে।