হাঁটুর সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরা ভালো মতোই জানেন যে তার ফলে জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে। হাঁটাচলায় অসুবিধে তো হয়ই, পা ভাঁজ করে বসা যায় না। বহু মানুষ ৫০ পেরোলেই আর্থ্রাইটিসের কবলে পড়েন, তাঁদের আরও অনেক বেশি যন্ত্রণা পেতে হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় যে সব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে চমকে ওঠার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে। এতদিন মনে করা হত যাঁদের হাঁটুতে কোনওরকম সমস্যা আছে, তাঁদের দৌড়ঝাঁপ করা চলবে না একেবারেই। আমাদের হাড়ের জোড়ের মুখে কার্টিলেজ নামের একটি রবারের মতো কোষ থাকে। দৌড়লে কার্টিলেজের উপর চাপ পড়ে বেশি। তা ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে আরম্ভ করে।
সমস্যা হচ্ছে, এই কোষের নিজস্ব ব্লাড সাপ্লাই থাকে না, ফলে শৈশবের পর কার্টিলেজের কোনও মেরামতি সম্ভব হয় না। বেশি বয়সে যাঁরা দৌড়তে আরম্ভ করেন, তাঁদের হাঁটুর উপর চাপ পড়ে বেশি। কার্টিলেজ কোনও কারণে ছিঁড়ে গেলে তাই সারানোর উপায় থাকে না। তাই একটা বয়সের পর না দৌড়ে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু বিজ্ঞান তো আর একটা জায়গাতেই আটকে থাকে না, নিত্য নতুন গবেষণা হয়, উঠে আসে চিকিৎসার নয়া ধরণ। তেমনই এক সাম্প্রতিক নিরীক্ষা বলছে, নিয়মিত দৌড়লে কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়, এ কথা যেমন ঠিক, তেমনই অত্যাধুনিক পরীক্ষায় জানা গিয়েছে যে এই কোষগুলি যদি আঁচ করতে পারে যে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে, তা অলে নিজেদের শক্তি বাড়াতে আরম্ভ করে!
অর্থাৎ, যিনি নিয়ম করে দৌড়তে অভ্যস্ত, তাঁর কার্টিলেজও সতর্ক এবং শক্তিমান। ছোটোখাটো সমস্যা সারাতে তা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সেই কারণেই যাঁরা খুব অ্যাকটিভ, নিয়মিত দৌড়ের অভেস আছে, তাঁদের হাঁটুর সমস্যা নিয়ে সাধারণত ডাক্তারের কাছে যেতে দেখা যায় না। দৌড়লে হাঁটুতে ধাক্কা লাগে, এটা ঠিক। কিন্তু হাঁটতে গেলে যতবার পা ফেলতে হয়, তার চেয়ে অনেক কম পদক্ষেপেই কাজ সারা হয়ে যায় সেটাও একইরকম সত্যি।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাড় জরাগ্রস্ত হয়, শক্তি হারাতে আরম্ভ করে। যদি দৌড়োনোর অভ্যেস থাকে, তা হলে পায়ের শক্তি বাড়বে, বাড়বে হাড়ের ঘনত্ব। তার ফলে হুট করে হাঁটুর ব্যথা শুরু হবে না। তবে নির্দিষ্ট গতিতে দৌড়োন, হঠাৎ করেই সেটা বাড়াবার চেষ্টা করবেন না। সমান রাস্তায় বা ছাদে দৌড়নোর অভেস থাকলেও চলবে। আর হ্যাঁ, যে কোনও ভালো কাজের মতোই এই অভ্যেস শুরু করারও নির্দিষ্ট টাইমলাইন নেই – যে কোনওদিন করলেই হবে!
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম