বিপুলা এ পৃথিবী কেবল মানুষের বসবাসের জন্য তৈরি হয়নি, তা আরও বেশ কিছু সুন্দর প্রাণীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কথা আমাদের – এ সহজ সত্যটা ক’জনের খেয়াল থাকে বলুন তো? অভিভাবকদের উচিত একেবারে শিশুকাল থেকে বাচ্চাদের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। তাতে পরবর্তীকালে সে নিজের দায়িত্বেই সংরক্ষণের ভার তুলে নেবে কাঁধে।
অনেকেই সন্তানকে পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় যান, টেলিভিশনে নানা ডকুমেন্টারি দেখান। পাশাপাশি প্রাণীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াও একান্ত জরুরি।
যেমন ধরুন, রাস্তায় ছোট বাচ্চা কোনও কুকুরছানা দেখল – স্বাভাবিকভাবেই সে এগিয়ে যাবে, তাকে কোলে তুলতে চাইবে। এই অবস্থায় ধারে-কাছে মা কুকুরটি থাকলে সে নিজের সন্তানকে রক্ষার জন্য তেড়ে আসবে – সেটাও স্বাভাবিক!
এই পরিস্থিতি দেখে বাচ্চাটি কী শিখল? বড়ো কুকুর তেড়ে কামড়াতে আসে, তাই না? কিন্তু সেটা তো পুরো সত্যি নয়! আপনাকে বোঝাতে হবে, মা কুকুর ভাবছে তার সন্তানের ক্ষতি হবে, তাই ভয় দেখিয়ে মানুষকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। পশুদের উপর, বিশেষ করে পথ কুকুরদের উপর আমরা এতটাই অত্যাচার করি যে তারা মানুষ দেখে ভয়ই পায়।
সাপ দেখলেই আঁতকে ওঠে মানুষ, তাকে মেরে ফেলে পিটিয়ে, পুড়িয়ে দেয়। হ্যাঁ, সাপের বিষ মানুষের পক্ষে প্রাণঘাতী হতে পারে, কিন্তু বিরক্ত না করলে বা ভয় না পেলে সাপ কামড়ায় না সাধারণত। বর্ষায় সাপের গর্তে জল ঢুকে যায়, গ্রীষ্মে হাওয়া ঢোকে না মোটে – তাই এ সময়েই তাদের দেখা মেলে বেশি।
যে কোনও জঙ্গুলে জায়গায় বা গ্রামের দিকে কোথাও বেড়াতে গেলে জুতো পরার আগে ভালো করে ঝেড়ে নেওয়া উচিত। কারণ সাপ উষ্ণতার আশায় জুতো বা মুখ খুলে রাখা ব্যাগের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তার পর নিজেকে বাঁচাতেই ছোবল মারতে পারে।
কোনও আহত বা অসুস্থ পশু বেশি হিংস্র হয়। কারণ সে জানে যে তার পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সঙ্গে বাচ্চা থাকলে মা পশু বা পাখি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই পাখির বাসায় ডিম থাকলে তার ধারে-কাছে না যাওয়াই ভালো।
অচেনা পশুকে দেখলেই তার ধারে-কাছে যাওয়া, সেলফি তোলা, খাইয়ে দেওয়ার মতো ভুলটা করার দরকার নেই। আমরা যে সব মানুষকে চিনি না, তাদের গায়ে হাত দিই কি? পশুদের ক্ষেত্রেও সে নিয়ম মানা উচিত।
যাঁরা জঙ্গলে বেড়াতে যেতে চান, তাঁরা মনে রাখবেন জঙ্গলের সৌন্দর্য গাছপালা-পশুপাখি মিলিয়ে। আপনি ঢুকলেন বলে পালে পালে পশুপাখি ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে আসবে না। ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফাররা বছরের পর বছর চেষ্টা করে তবে একখানি ভালো ফ্রেম পান।
জঙ্গলে গেলে ধৈর্য ধরাটা আগে শিখতে হবে। খুব চড়া রঙের পোশাক পরে, সুগন্ধি মেখে বন্যপ্রাণীর কাছে যাবেন না, তাতে তাদের অসুবিধে হয়।
যাঁরা বাড়িতে কোনও পশু বা পাখি আনার কথা ভাবছেন, তাঁরা অবশ্যই আগে ভালো করে ভেবে নিন তার দায়িত্ব নিতে পারবেন কিনা। একটি পশুকে সারা দিনের জন্য ঘরে বন্ধ করে বা ছাদে বেঁধে রেখে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না। তার অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার দেখাতে হবে, মুড খারাপ থাকলে আদর করতে হবে। সন্তানপালনের মানসিকতা থাকলে তবে পোষ্য রাখা উচিত।