অনেকেই মনে করেন ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া, ব্যায়াম করলে শরীর বেশিদিন ভালো থাকে। ধারণাটা যে খুব ভুল, তা নয়। তবে সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে যাঁরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, মারাত্মক স্ট্রেস নেন বা সেডেন্টারিও লাইফ লিড করেন, তাঁদের ধমনীর উপরেও বাড়তি চাপ পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশগতির ধারাও এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তো কথাই নেই!
ধমনী বা আর্টারি অক্সিজেনে ভরপুর বিশুদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেয় আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আরম্ভ করে পায়ের নখের গোড়া পর্যন্ত সর্বত্র। রক্তে অক্সিজেন ছাড়াও ক্যালশিয়াম, ফ্যাট, কোলেস্টেরল, সেলুলার বর্জ্য, ফাইব্রিনের মতো নানা উপাদান ঘুরে বেড়ায়। কারও কারও ক্ষেত্রে ধমনীর ভিতরের দেওয়ালে এই সব উপাদান জমতে আরম্ভ করে – একে প্লাক বলা হয়।
সমস্যা হচ্ছে, একবার প্লাক জমতে আরম্ভ করলে তার মোকাবিলায় আর্টারির দেওয়ালের কোষ বিভাজন বাড়ে, তা থেকে নানারকম ক্ষরণ হয় – ধীরে ধীরে সরু হয়ে আসে ধমনী, স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থারই পোশাকি নাম হচ্ছে ক্লগড আর্টারি। তা থেকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।
আগে থেকে কি বোঝা যায় আপনার আর্টারি ক্রমশ বুজে আসছে? সাধারণত যায় না। বলা হয় যে বয়স কুড়ির কোঠা পেরনোর পর থেকে রক্তে কোলেস্টেরল, চিনির মাত্রা মাপানো উচিত, দেখা উচিত ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক কিনা। কিন্তু এত সতর্কতা আর কে-ই বা মেনে চলেন? তবে যে সব পরিবারে ক্লগড আর্টারির সমস্যা থাকে, তাদের অন্তত ৩০ এর পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার চেকআপ করানো উচিত। তাতে আচমকা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো সমস্যা এড়াতে পারবেন।
পায়ে, পিঠে বা হাতে আচমকা, কোনও কারণ ছাড়াই তীব্র ব্যথা হচ্ছে কী? জানবেন, রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে এমনটা হতে পারে। ৪০-এর পর থেকে যে সব ব্যথার ব্যাখ্যা খুঁজে পাবেন না, তার প্রতিটিকেই সতর্কবার্তা ভাবুন। শ্বাসকষ্ট, বমিভাব, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও থাকে। শরীরের একদিক অবশ হয়ে আসতে পারে, কমে আসতে পারে এক চোখের জ্যোতি।
এর চিকিৎসা কীভাবে হবে, সে বিষয় নির্ধারিত হবে আপনার আর্টারি আর হার্টের অবস্থা দেখে। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন মাথা ঠান্ডা রেখে। হাসপাতালে যেতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব – এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি মুহূর্ত দামি। আর হ্যাঁ, যাঁরা ভাবছেন, ফিট হয়েও যদি এই সমস্যা হয়, তা হলে আর সুস্থ থাকার চেষ্টা করে কী হবে – তাঁরা গা ঢিলে দেওয়ার ভুলটা করবেন না। অ্যাকটিভ থাকা খুব জরুরি, হার্ট অ্যাটাকের পরেও শরীরকে যত্নে রাখতেই হবে।