আপনি চমৎকার লোকেশন, বিরাট বহুতল দেখে সারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় ব্যয় করে একটি ফ্ল্যাট কিনলেন এবং যথাসময়ে তার মিউটেশন করাতে গিয়ে দেখলেন যে ফ্ল্যাটের নকশার বৈধ অনুমতিই দেয়নি পুরসভা। অর্থাৎ, আপনার প্রপার্টি বেআইনি, তার রি-সেল ভ্যালু শূন্য! অথবা প্রোমোটার প্ল্যান বাবদ যে কাগজটি আপনাকে দেখিয়েছেন, সেটি আদ্যন্ত জাল – পুরসভা বিন্দুবিসর্গ জানে না!
ঠিক এইভাবে বহু মানুষ প্রতারিত হয়েছেন রাজারহাট-গোপালপুর অঞ্চলে ফ্ল্যাট কিনে – কিছুদিন হল তা প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি সত্যিই এতটা ঘোরালো হয়ে উঠেছে যে বিধাননগর পৌরসভাকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হয়েছে, কেউ যেন নতুন ফ্ল্যাট কেনার আগে অতি অবশ্যই সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে নেন ভালো করে।
এ কথা অনেকেই জানেন না যে তৈরি হয়ে যাওয়া ফ্ল্যাট কেনার আগে ৫টি নথি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া একান্ত জরুরি।
সেল ডিড: সই করার আগে খুব ভালো করে খতিয়ে পড়ে নিন সমস্ত পয়েন্ট। দরকারে উকিল নিয়োগ করুন। সেল ডিড সম্পত্তি হস্তান্তরের সবচেয়ে জরুরি খতিয়ান, খুব ভালো করে তা না দেখে কোনও কাগজে সই করবেন না।
কমপ্লিশন সার্টিফিকেট ও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট: দুটো কাগজই একান্ত জরুরি, তা না হলে লোন পেতে অসুবিধে হবে। কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি দেবে কর্পোরেশন বা মিউনিসিপ্যালিটি – ফ্ল্যাট বানানো হয়ে গেলে প্রমোটার সব কাগজপত্র জমা দেবেন সেখানে, খতিয়ে দেখে সরকারি সংস্থার তরফে সিসি দেওয়া হবে। বাড়িতে থাকা যায় তা নিশ্চিত হওয়ার পর ওসি বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেবে স্থানীয় বোরো অফিস। এই দুটি কাগজ না পেলে পানীয় জল, নর্দমার কাজ, বিদ্যুতের কানেকশন হবে না।
বিল্ডিং প্ল্যান: প্রপার্টি কেনার আগে খুব ভালো করে বিল্ডিং প্ল্যান দেখে নিতে হবে। সাধারণত স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি বা কর্পোরেশন থেকে ছাড়পত্র পায় বিল্ডিং প্ল্যান। এই নথির সঙ্গে বাড়ির নকশা, লেআউট থাকার কথা, খুব ভালো করে দেখে নিন এর প্রতিটির ছাড়পত্র আছে কিনা।
রাজারহাটের জমির প্ল্যান স্যাংশন করে বিধাননগর পুরসভা, সেখানে অনুমোদনের তিন বছরের মধ্যে বাড়ি তৈরি না হলে প্রমোটারকে প্ল্যান ফের পাস করাতে হবে এমনই নিয়ম। অধিকাংশ প্রমোটারই সে সবের ধার ধারেননি, পুরোনো প্ল্যানেই বাড়ি তৈরি করে বেচে দিয়েছেন। কেউ আবার বাতিল প্ল্যানের কাগজ জাল করে বাড়ি বানিয়ে বিক্রি করেছেন। যদি প্ল্যানের বাইরে গিয়ে কোনও আনঅথরাইজড অংশ বানানো হয়ে থাকে, তা হলে কিন্তু পরে অকুপেন্সির কাগজ বের করা যাবে না।
এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট: আপনার বাড়ি বা জমির কোনও আইনি বা আর্থিক জটিলতা যে নেই তা প্রমাণ করবে এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট। যেখানে বাড়ির দলিল জমা করা হয়েছে, সেই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে এই কাগজ বের করা যাবে।
মিউটেশন সার্টিফিকেট: সরকারের খাতায় সম্পত্তির অধিকারী হিসেবে আপনার নাম থাকবে মিউটেশনের দৌলতেই। যতদিন না মিউটেশন হচ্ছে, আপনি ট্যাক্স দিয়ে পারবেন না। ট্যাক্স দিতে না পারলে আপনার বাড়ির কোনও মূল্য নেই। তাই বাড়ি কেনার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিউটেশন করিয়ে নিন।