কোভিডের কারণে আমরা সবাই ফের অনিশ্চয় ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, প্রিয়জনকে হারানোর আতঙ্ক চেপে ধরছে ক্রমশ।
হয়তো কাজ থাকবে না, ঘরে আটকে থাকতে থাকতে গ্রাস করবে বিরক্তি, বাচ্চার বায়না বাড়বে, সামান্য ব্যাপার নিয়ে তর্ক লাগবে বড়োদের সঙ্গে, ঘরের কাজে যাঁরা সাহায্য করেন তাঁরা কতদিন আসতে পারবেন তার ঠিক নেই – এই পরিস্থিতি আবার শুরু হবে ঘরে ঘরে।
কোভিডের ফলে যে সব সমস্যা খাড়া হচ্ছে, তার একেবারে শীর্ষে থাকবে মানসিক সমস্যা। WHO মেনেই নিয়েছে যে দুটো অতিমারি একেবারে পাশাপাশি চলছে হাত মিলিয়ে, একটা শারীরিক, অন্যটা মানসিক।
যাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন, তাঁদের সব সময়েই মনে হচ্ছে যে তাঁরা নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারছেন না। যাঁদের চাকরি নেই, তাঁরা এক ধরনের সমস্যায় ভুগছেন — যাঁদের আছে তাঁদের মাথায় ঝুলছে ছাঁটাইয়ের খাঁড়া। ফের পিছিয়ে গেল সর্ব ভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষার এপ্রিল সেশন – যে সব পড়ুয়া দাঁতে দাঁত চেপে প্রস্তুতি নিয়েছে, তাদের অবস্থাটা আন্দাজ করতে পারছেন?
আর এ সবের মিলিত প্রভাবেই আমাদের সবার ব্যক্তিজীবন টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গার্হস্থ্য হিংসা আর নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, জটিল হয়ে উঠছে দৈনিক জীবনযাপন।
. এই অবস্থা থেকে বেরোতে চান? তা হলে সবার আগে আপনার জীবনে একটা রুটিন ফিরিয়ে আনুন। দেশি-বিদেশি মনস্তত্ত্ববিদেরা একবাক্যে মেনে নেন যে রুটিন আমাদের মনের মধ্যে একটা নিরাপত্তার বোধ তৈরিতে সাহায্য করে। যদি আপনার বাচ্চা জানে যে তাকে অঙ্ক ক্লাসের পর ইংরিজি বা ছবি আঁকা নিয়ে বসতে হবে, তা হলে সে আপনার কাজের সময়ে বিরক্ত করবে না।
. বাড়ির বয়স্ক সদস্যরা বাইরে বেরোতে না পারলে বাচ্চাদের মতোই অস্থির হয়ে যান। তাঁদেরকেও কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সকালে-বিকেলে লনে হাঁটা, সম্ভব হলে বাড়ির ছোটদের গল্পের বই পড়ে শোনানো বা ছড়া শেখানোর দায়িত্ব দিন।
. অফিসের কাজ সময়ে শেষ করুন। যাঁরা চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন বলে মন খারাপ করে বসে আছেন, তাঁরা আপাতত কিছুদিন সঞ্চয়ের ভরসায় চালানোর প্রস্তুতি নিন – এছাড়া অন্য রাস্তা নেই। মাঝে নতুন কিছু স্কিল শিখতে পারেন, খুব ভেবে-চিন্তে ব্যবসা করতে পারলে করুন, না হলে খামোকা ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। কিছুদিন চালানোর সংস্থান না থাকলে অবশ্য যে কোনও চাকরিতে ঢুকে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
. যদি গরমের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার বুকিং করে থাকেন, বাতিল করুন। এছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। টাকা নষ্ট হবে বলে অপেক্ষা করাটা মূর্খামি হবে। আপাত্ত বছরখানেক এই ধরনের সব পরিকল্পনা স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।