সাধারণ অবস্থায় আমরা যে খাবার খাই, তা থেকেই শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খিনিজ বা মিনারেল পেয়ে যায়। এগুলো এমনিতেও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, একগাদা দরকার হয়ও না। যাদের শরীরে কোনও ঘাটতি থাকে, বা বিশেষ কোনও প্রয়োজন থাকে, তারাই সাপ্লিমেন্ট নেয় সুষম, পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি।
কিন্তু কোভিডের বাড়বাড়ন্ত হওয়ার পাশাপাশি আমরা ভিটামিনের গুরুত্ব নতুন করে বুঝতে শিখেছি এবং ইমিউনিটিকে জোরদার করে তোলার জন্য তার ব্যবহারও বেড়েছে। ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, জিঙ্ক মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যাচ্ছে বাজার থেকে। তার একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিচ্ছে মানুষের শরীরে।
কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বাড়তি ভিটামিন থেকে?
এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বুঝে নিতে হবে – ভিটামিন দু’ রকম হয়। জলে দ্রবীভূত ও তেল বা চর্বিতে দ্রবীভূত। ভিটামিন সি আর বি কমপ্লেক্স ওয়াটার সলিউবল। আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেললেও তা মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে শরীর থেকে।
তবে খুব বেশি ভিটামিন সি থেকে পাতলা পায়খানা, বমিভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন বি৩-র বাড়াবাড়িতে লিভারের সমস্যা, বি৬-এ ত্বকের সমস্যা, অতিরিক্ত বি৯ (ফোলেট)-এ ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তা থেকে হতে পারে নার্ভ ড্যামেজ। তবে খুব বেশিমাত্রায় ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন খেলে তবেই এরকম হয়।
তুলনায় বেশি সতর্ক থাকতে হয় ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন, যেমন এ, ডি, ই আর কে-র ক্ষেত্রে। এগুলি বাড়তি মাত্রায় খেলে আপনার টিস্যুতে তা জমে থাকবে। সবচেয়ে মারাত্মক টক্সিসিটির আশঙ্কা থাকে ভিটামিন ডি থেকে – রক্তে ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে অরগান ড্যামেজ হতে পারে। ই থেকে হতে পারে ব্লাড ক্লটিংয়ের সমস্যা।
অতিরিক্ত জিঙ্ক শরীরে গেলে পেটে ক্র্যাম্প ধরতে পারে। বেশি আয়রন থেকে হয় কনস্টিপেশন। সেলেনিয়ামের কারণে চুল উঠতে পারে।
তা হলে কি ভিটামিন বা মিনারেল খাওয়া বন্ধ করে দেবেন?
আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, সুষম, পুষ্টিকর, স্থানীয় খাবার খাওয়ার উপর জোর দিন। এক-আধদিন তেল-মশলা দিয়ে ভালো করে রান্না হল, আলাদা কথা। রোজের খাবার খুব হালকা হওয়া উচিত। ফল, স্যালাডের মতো কাঁচা খাবার ভালো করে ধুয়ে খাবেন। ডাল, ডাবের জল, ছাতুর শরবত, ঘোল ইত্যাদি তরল খাবারও খান রোজ – তাতে শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় থাকবে। সব মরশুমি সবজি খান, অল্প হলেও বাদাম খেতে পারলে ভালো হয়।
এর পরেও যদি ডাক্তারের মনে হয় যে আপনার সাপ্লিমেন্টের দরকার, তা হলে তিনিই দেবেন। বিশেষ করে যাঁরা কোভিড থেকে সেরে উঠছেন, তাঁদের হয়তো সত্যিই খানিকটা বাড়তি পোষণ দরকার। নিজের ইচ্ছেয় সকাল থেকে উঠে খালি পেটে ভিটামিন খেতে আরম্ভ করলে কারও কারও স্বাস্থ্য হয়তো ভালো থাকে – আপনার থাকবে কী? সবার আগে সেটাই বুঝে নিতে হবে।