PCOS/ PCOD সম্পর্কে দুটো তথ্য ভুরুতে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য। এক, ভারতে প্রতি পাঁচ মহিলার একজন এই সমস্যায় ভোগেন, সারা পৃথিবীর নিরিখেও এ পরিসংখ্যানের বিশেষ কোনও ফারাক হয় না। দুই, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যাঁদের এই সমস্যা আছে, তার ৭০ শতাংশই দিনের পর দিন মুখ বুজে সয়ে যান, ডাক্তারের চৌকাঠ মাড়ান না! বিশেষ করে গরিব দেশের গ্রামীণ মহিলারা তো এ সম্পর্কে এখনও সচেতনই হয়ে ওঠেননি!
কাকে বলে PCOS/ PCOD? পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম/ ডিজিজ থাকলে মহিলাদের শরীরে পুরুষ হরমোনের প্রভাব বেড়ে যায়। ফলে ওভারিতে সিস্ট দেখা যায়, পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে পুরুষ হরমোনের প্রভাবে শরীরের নানা স্থানে অবাঞ্ছিত চুল দেখা যায়, টাক পড়ে যায় অনেকের। সেই সঙ্গে মুড সুইং, ব্রণর উৎপাত আর ওজন বাড়ার সমস্যা তো বাড়তি পাওনা।
ঋতুমতী মেয়েরাই এই সমস্যার শিকার হন। আর পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকলে সন্তানধারণে অসুবিধে হয়। হরমোন নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে যায়, ইনসুলিনের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না শরীর, ফলে বাড়ে ডায়াবেটিসের সমস্যা। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ইনফ্ল্যামেশনের সমস্যাও। প্রদাহের কারণে আরও নানা ক্রনিক অসুখ হতে পারে।
সুবিধের দিকটা হচ্ছে, এখন মেয়েরা তাঁদের এই সব সমস্যা প্রকাশ্যে আলোচনা করছেন, মুখ খুলছেন সেলেব্রিটিরা। সোনম কাপুর প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন যে তিনি ১৪ বছর বয়স থেকে এই সমস্যায় ভুগছেন। বহু ডাক্তারের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং তার পর নিজের মতো করে কয়েকটি রুটিন মেনে আপাতত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন এই সমস্যা।
তবে সেই সঙ্গে মনে রাখবেন, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কিন্তু এক-একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম সমস্যা তৈরি করে। তাই রুটিন তৈরির আগে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
টিপস ১: প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন
হাঁটা অতি জরুরি একটি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া যা আপনাকে সুস্থ রাখবে, বজায় রাখবে হরমোনের ভারসাম্য। ভালো একটি জুতো থাকলেই হবে, হাঁটার জন্য অন্য কোনও সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। দিনে অন্তত ১০০০০ পা হাঁটার চেষ্টা করুন, তাতে শরীর ভালো থাকবে। নিয়মিত হাঁটলে আপনার ওজন কমবে, শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে।
টিপস ২: আস্থা রাখুন যোগাভ্যাসে
যোগাভ্যাস আর মেডিটেশন আপনার স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। স্ট্রেস কম থাকলে আপনার হরমোনের স্তরে ভারসাম্য বজায় থাকবে। প্রাণায়াম করুন, তাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ ফিরবে, আপনি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, মুড ভালো থাকবে। শক্তি বাড়াতে চাইলে হঠযোগ ট্রাই করুন, কার্ডিও-ভাস্কুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে সূর্যনমস্কার।
টিপস ৩: লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েটে মেনে চলুন
ডায়েটের উপর আপনাকে নিয়ন্ত্রণ বজার রাখতেই হবে। লো-জি আই ডায়েট মানে আপনাকে আস্থা রাখতে হবে ফল, সবজি আর হোল গ্রেনের উপর। বেশি তেল-মশলাদার খাবার খাবেন না, চলবে না ভাজাভুজি। সবচেয়ে বড়ো কথা, যে কোনও মিষ্টি থেকে দূরে থাকতে হবে। চিনি তো চলবেই না, বাদ রাখুন মধু, মেপল সিরাপ, গুড়ও। তা হলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সুবিধে হচ্ছে, মিষ্টি খাওয়া একবার বন্ধ করে দিতে পারলে আপনি আর তার অভাব বোধ করবেন না।
View this post on Instagram