ফের বেড়েছে লকডাউন, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে স্ট্রেস। বাড়িতে আরও বেশ কিছুদিন আটকা পড়ে থাকতে হবে, এভাবে কতদিন চলবে, কাজকর্মের কী হবে তা কেউ জানে না – ফলে মেজাজ সর্বক্ষণ খিঁচিয়ে আছে। ঝগড়া, মন কষাকষি হচ্ছে পরিবারের সকলের সঙ্গে। এই অবস্থায় আপনি একা নেই কিন্তু – অধিকাংশেরই এক হাল!
আমরা যদি একটু মানিয়ে চলার চেষ্টা করি, তা হলেই পরিবারের সকলের সঙ্গে সদ্ভাব রাখাটা সহজ হয়ে আসবে। আর সহজ আদান-প্রদানের প্রথম ধাপটা কী জানেন? নিজের ভুলটা মেনে নেওয়া, ‘সরি’ বা ‘অন্যায় হয়ে গিয়েছে, আর এমন করব না’ বলা।
. অনেকেই নিজের ইগো ছেড়ে দোষ স্বীকার করতে পারেন না। দরকারে হাজারটা মিথ্যে কথা বলেন, তর্ক করেন – কিন্তু মানেন না যে তিনি কোনও ভুল করেছেন। প্রাচীন চৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্র কী বলে জানেন? আপনি যতবার রাগ করেন, মিথ্যে বলেন, অন্যায় করেন, ততবার ক্ষতি হয় শরীরের।
আমাদের শরীর আর মন পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। অবচেতন মনের রেজিস্ট্রি খাতায় নিজের সব অপরাধের তালিকা থাকে। আর সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে অন্যায়টাকে মেনে নেওয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। মানুষ যে মুহূর্তে সেটা করে, তখনই নাকি মন ভালো হয় – শরীরও সারতে থাকে। প্রাচীন চৈনিক চিকিৎসকরা মন থেকে ‘সরি’ বলাটাকে খুব গুরুত্ব দিতেন – বহু রোগের চিকিৎসায় তা ব্যবহারও করতেন।
# ১. তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিজের দোষ মেনে নিন, ভুল স্বীকার করুন।
. মানুষ সামাজিক প্রাণী, সে কিছু নিয়ম মেনে চলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। আবার সেই সঙ্গে নিয়মের প্রতি তার বিতৃষ্ণা জন্মাবে, সেটাও একইরকম বাস্তব। অনেক সময় না জেনে-বুঝে আমরা এমন কিছু নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করি, যাতে হয়তো লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হয়। কম বয়সে সেটা বোঝা যায় না, মাথা গরম থাকলেও অনেক সময় আমরা তলিয়ে ভাবি না।
কিন্তু পরে যখন রাগ কমবে, তখন অযথা নিয়ম ভাঙার জন্য খারাপ লাগলে দুঃখ চেপে রাখবেন না – কাউকে ডেকে বলুন। আপনি নিজেও জানেন, ট্রাফিক আইন ভাঙাটা অন্যায়, তাই নিয়ম ভাঙার পর ধরা পড়লে অযথা চোখ রাঙাবেন না – সরি বলুন।
# ২. সামাজিক নিয়মকানুন ভাঙতে থাকলে সমাজের কাঠামোটাই খসে পড়বে একদিন। তাই কখনও তা করলে ভুল স্বীকার করে নিন।
. মন থেকে নিজের ভুল মানতে পারলে তবে সরি বলুন, তা যেন কথার কথা হয়ে না যায়। অনেকের মনে হয় ভুল স্বীকার করে নিলে প্রতিপক্ষের কাছে তিনি ছোটো হয়ে যাবেন। এই মানসিকতা নিয়ে ক্ষমা চাইলে কিন্তু আপনার ভিতরে রাগ আর আক্ষেপ রয়েই যাবে। তাতে লাভের চাইতে ক্ষতির চান্স বেশি – কারণ আপনার স্ট্রেস বাড়বে। অনেক সময় আমাদের ভুল কারও চোখে পড়ে না, খুব সহজেই তা চেপে যাওয়া যায় – সেটাও কিন্তু নিজের সঙ্গে অঞ্চকতা করা। যেদিন এই সব ঝেড়ে ফেলতে পারবেন, সেদিনই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি মিলবে।
# ৩. ক্ষমা চাইতে হবে মন থেকে – তা হলে স্ট্রেস কমবে ম্যাজিকের মতো।
. খারাপ ব্যবহার করে খুব কাছের মানুষকে কষ্ট দিয়েছেন? তা হলে আর দেরি না করে সরি বলে দিন। হয়তো তিনি আপনাকে মন থেকে মাফ করতে পারবেন না কোনওদিন, হয়তো তিক্ততা কমবে না। কিন্তু আপনি জানবেন যে আপনার দিক থেকে চেষ্টার কোনও খামতি ছিল না। একটা অতিমারি কত প্রিয়জনকে কেড়ে নিল বলুন তো? এমনও তো হতে পারে যে পরে আর দেখাই হল না – তাই রাগ আঁকড়ে বসে থাকার কোনও মানেই নেই!
# ৪. সরি বললে অপরাধবোধে ভুগবেন না সারা জীবন – সেটাই কি আর কম পাওয়া?
. সব মানুষই কখনও না কখনও ভুল করে, কিন্তু সবাই তা মন থেকে স্বীকার করতে পারে না। যদি আপনি পারেন, তা হলে বুঝতে হবে যে মানসিকভাবে আপনি অনেকটাই পরিণত। তা ছাড়া নিজের ভুল স্বীকার করার পরের ধাপে আপনি নিশ্চিতভাবেই বদলানোর চেষ্টা করবেন। একমাত্র তা হলে মানুষ হিসেবে উন্নতি করা সম্ভব।
# ৫. নিজের দোষ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে মানুষ হিসেবে উন্নতির চেষ্টায় আছেন আপনি।