এ লেখাটা আমাদের পুরুষ পাঠকদের তো কাজে লাগবেই, যে সব মেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ভাবছেন, তাঁরাও খুব সহজেই আপনার ভাবি জীবনসঙ্গীকে অসুবিধের দিকগুলো বুঝিয়ে বলতে পারবেন। সবচাইতে ভালো হয় যদি একে অপরের সুবিধে-অসুবিধের দিকে গোড়া থেকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
#
১. আমাদের দেশে এখনও পুরো পরিবার, অন্ততপক্ষে মা-বাবা, ছেলে ও ছেলের স্ত্রী-পুত্র একসঙ্গে থাকাটাই দস্তুর। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, তবে এখনও কোনও নারী-পুরুষ বিয়ের পর পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে নিজের মতো সংসার পাতলে সমাজ বাঁকা চোখে তাকায়। মুখ বেঁকিয়ে কেউ না কেউ বলবেই, “দেখলে, শ্বশুরঘর করল না একটা দিনের জন্যেও। বরকে নিয়ে কেমন আলাদা হয়ে গেল! বুড়োবুড়ি শেষ বয়সে একা হয়ে যাবে একেবারে!”
দেখুন, সময় বদলেছে। একটা সময়ে সতীদাহও সামাজিক প্রথা ছিল, মেয়েদের ইশকুলে না পাঠানোও সমাজের চোখে মান্যতা পেত। এখন কিন্তু মেয়েরা ফাইটার প্লেন চালায় স্বচ্ছন্দে! যে সব পরিবারে একটি বা দু’টি কন্যাসন্তান, তাদের বাবা-মাও তো মেয়ের বিয়ের পর একা থাকেন। তখন অসুবিধে হয় না, ছেলের বাবা-মা একা থাকলেই বা চোখ টাটাবে কেন?
তা ছাড়া, এই আলাদা সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই মেয়েটি একা নেয়নি, স্বামীরও সমর্থন ছিল – তাই অত দুঃখ পাওয়ার তো কিছু নেই। বিদেশে দীর্ঘকাল প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে না, তাতে কি সব মা-বাবা চরম অবহেলায় থাকেন? এ সব বস্তাপচা চিন্তাভাবনা তাড়ানো উচিত।
কোনও নতুন দম্পতি কীভাবে থাকতে চায়, সেটা একেবারেই তাদের সিদ্ধান্ত। সম্পর্ক ভালো থাকলে একে অপরের পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হতে তাদের বাধবে না। কেউই নিজেকে ভিলেন প্রমাণ করতে চায় না – নতুন বিয়ে হয়ে আসা কোনও মেয়ে তো একেবারেই না!
#
২. নতুন পরিবারে এসে নতুন নিয়মকানুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হয়। মুশকিল হচ্ছে, অধিকাংশ শ্বশুর-শাশুড়ি মনে করেন, নতুন মেয়েটি এসে চটপট স্বামীর বাড়ির নিয়মকানুনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। সমস্ত দায়-দায়িত্ব থেকে বাড়ির বড়োদের মুক্তি দেবে – কিন্তু শাশুড়ি বা শ্বশুরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইবে না।
যে সব শ্বশুর-শাশুড়ি এমনটা মনে করেন না, এবং অন্য পরিবার থেকে আসা মেয়েটিকে তার ফেলে আসা জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের সংসারে উঁকি মেরে দেখুন একবার – ফারাকটা বুঝে যাবেন! হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমন মানুষ কিন্তু আছেন।
খেয়াল রাখবেন, আজকাল বেশিরভাগ পরিবারেই কন্যা সন্তানকেও পুত্রের যত্নেই মানুষ করে তোলা হয়, তাকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন বেশিরভাগ বাবা-মা। তাই সংসারের সব কাজে যে তিনি পারদর্শী হবেনই, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ছেলেদের ঘরের কাজ না জানাটা যদি অপরাধ না হয়, তা হলে মেয়েদের গায়েই বা সে কলঙ্ক লাগবে কেন?
শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামীর সহযোগিতা পেলে, ভালোবাসা পেলে যে কোনও মেয়েই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু গোড়াতেই তার জন্য বিচারসভা বসাতে যাবেন না। সময় দিন, তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন। সে সব ছেড়ে একটা নতুন পরিবেশে আসছে। এই ট্রানজিশনটা সহজ করে তোলার চেষ্টা করাটা জরুরি।
#
৩. মানিয়ে চলার দায় একা মেয়েটির কেন হবে?
একা মেয়েদের উপর সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়, আর তা থেকে চরম ক্লান্তি আসে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটলও ধরায় এমন চিন্তাভাবনা। অ্যাডজাস্ট সবারই করা উচিত। আর স্বামী-স্ত্রীর কাজই হচ্ছে একে অপরের সমস্যাগুলো বুঝে চলা। মনে রাখেবন, পৃথিবীর কেউই পারফেক্ট হয় না। বিয়ে করে যে মেয়েটি আসছে সেও না। তার সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টাও করা উচিত।
শ্বশুরবাড়ির লোক একটু এগিয়ে হাত ধরলেই অধিকাংশ সংসার ভাঙবে না – পরখ করেই দেখুন না একবার! মেয়েটিকে হুকুম করবেন না, সময় দিন, স্বচ্ছন্দ হতে দিন। আপনাদের পছন্দ-অপছন্দগুলো ভালোবেসে বুঝিয়ে দিন – তাকে কোনও কিছু করতে বাধ্য করবেন না।
#
৪. বাপের বাড়ির খোঁটা দিয়ে কথা বলা হচ্ছে আর একটা সমস্যার জায়গা। কথায় কথায় ‘মা-বাবা কিছুই শেখায়নি’, ‘তোমার বাড়ির নিয়ম এখানে চলবে না’ মার্কা মন্তব্য করলে গায়ে লাগবেই।
শ্বশুরবাড়িই যদি কোনও মেয়ের আসল বাড়ি হয়, তা হলে প্রথম থেকেই তার সেখানে অধিকার থাকবে। সে কী পরবে, নিজের গয়না কোথায় রাখবে সেটা তার একার সিদ্ধান্ত। সেই অধিকারটা পেতে যেন তার অনেক বছর সময় না লাগে।
#
৫. বাপের বাড়ির রান্নার স্বাদ ভোলা সহজ নয় – মায়ের হাতের রান্নার জন্য তার মন কেমন করবেই। এই ছোটো ছোটো বিষয়গুলো নিয়ে তাকে বিব্রত করবেন না। কোনও পুরুষ যই তাঁর মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ ভুলতে না পারেন, তা হলে মহিলারও তা পারার কথা নয় – এটা মনে রাখা জরুরি।