সারাক্ষণ খবরের কাগজ, নিউজ পোর্টাল বা যে কোনও মিডিয়ায় আপনিও নিশ্চয়ই দেখছেন যে করোনার দাপটে সারা দেশ কাঁপছে? অনেকেই হয়তো এত আতঙ্কের পরিবেশ আর নিতে পারছেন না – তাঁদের জন্যই আছে চমৎকার একটি খবর।
গত এক মাসের পরিসংখ্যান বলছে, অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা বাড়লেও সারা দেশে যত পেশেন্ট অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন এতকাল, তাঁদের সংখ্যা কমছে ধীরে ধীরে। তার একটা অর্থ হচ্ছে, এখনও করোনা ভাইরাসে বহু মানুষ আক্রান্ত হলেও জটিল সমস্যা তৈরি হচ্ছে অনেক কম রোগীর।
এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে যত করোনা আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন ছিল ৪.৫% রোগীর। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে যে হিসেব এসে পৌঁছেছে গোটা দেশ থেকে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে ৩.৭% রোগীকে আক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
এক মাস আগেও আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন করোনা আক্রান্তদের ২.৩১%, এ মাসের আনুমানিক হিসেব বলছে মাত্র ১.৩৪% রোগীর আইসিইউয়ের প্রয়োজন হচ্ছে, ভেন্টিলেটরেও দিতে হচ্ছে তুলনায় কম পেশেন্টকে।
এই পর্যন্ত পড়েই নিশ্চয়ই আপনি ভাবতে আরম্ভ করেছেন, তা হলে দেশ জুড়ে বেডের আর ভেন্টিলেটরের এমন আকাল কেন? এখনও তো বহু মানুষ এগুলির অভাবেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন! ভারতবর্ষের মতো দেশের জনসংখ্যার হিসেবে এক শতাংশ মানুষ মানেই কয়েক লক্ষ প্রায় – আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্রটাই খুব করুণ। অতিমারি সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো তো নেই-ই – তাই সারা দেশের হাসপাতালেই ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই পরিস্থিতি।
মনে রাখতে হবে, অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা কিন্তু এখনও বাড়ছেই রোজ, শহর ছাড়িয়ে তা ক্রমশ গ্রামের দিকে এগোচ্ছে – এমনটাই বলছে স্বাস্থ্য দফতর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. হর্ষ বর্ধনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একটি দল নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ছোটো শহরের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্দেশ্য নিয়ে।
এখনও পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা এখনই কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে মহারাষ্ট্রে কিন্তু কেস লোড খুব ধীর গতিতে হলেও কমছে। দেশের অন্তত ১৮০টি জেলায় গত সাতদিনে নতুন কোনও সংক্রমণের খবর নেই। সম্ভবত আর কিছুদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ওয়েভ দাঁত-নখ হারাবে।
এই পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন?
. বাড়ির বয়স্কদের টিকাকরণ সুনিশ্চিত করুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না, আপাতত বেড়ানো ইত্যাদি স্থগিত রাখুন।
. বাড়িতে বাইরের কেউ এলে সমস্ত সারফেস স্যানিটাইজ করে নিন।
. বাইরে থেকে এসে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন, জামাকাপড় কেচে নিতে হবে।
. কোনও লক্ষণ দেখা দিলে প্যানিক করবেন না, আইসোলেশনে থাকুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
. পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে বাড়িতে মাস্ক পরুন।
. ঘাবড়াবেন না, ভয় পাবেন না। কেবল নির্দেশ মেনে চলুন।
. ভিড়ে যাওয়া চলবে না। পরিবারের কোনও অনুষ্ঠানেও লোক ডাকবেন না এখন কিছুদিন।