বাবা-মা হিসেবে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে চাই আমরা সবাই। রাতারাতি কারও সন্তান বড়ো হয়ে ওঠে না, একেবারে ছোটো থেকে প্রতিটি দিন তার পাশে থাকতে হবে। তবেই আপনার সন্তান আত্মবিশ্বাসে ঝলমলিয়ে উঠতে পারবে।
কিন্তু সন্তানকে ঠিকভাবে মানুষ করার কোনও সহজ উপায় আছে কি? UNESCO-র একটা গাইডলাইন আছে, যেটা আমাদের খুব মনে ধরেছে। এই সংস্থার হয়ে প্রচুর তথ্যসম্বলিত একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন কার্লোটা নেলসন, ছবিটির নাম ‘ব্রেন ম্যাটারস’। তাঁর গবেষ্ণার ভিত্তিতে কার্লোটা তুলে ধরেছেন ৫টি খুব সহজ পয়েন্ট।
১. বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন, একেবারে ছোটো থেকেই
খুব শিশুকাল থেকেই বাচ্চার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা অভ্যেস করতে হবে। বাচ্চা যেন বোঝে আপনি তার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। মন দিয়ে শুনুন, ছেলেমানুষের বোঝার মতো যুক্তি দিন। তার কথায় যুক্তি থাকলে মেনে নিন। একেবারে ছোটো শিশুও নানা আওয়াজ করে নিজের প্রয়োজনের কথাটা বুঝিয়ে দেয় – সেই তখন থেকেই বাচ্চার সঙ্গে কমিউনিকেট করার অভ্যেস করতে হবে।
তা হলে আপনার বাচ্চা বড়ো হয়েও পরিষ্কার চিন্তাভাবনা করতে আর কথা বলতে শিখবে। নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে দ্বিধা করবে না।
২. বই পড়ে শোনান
ভাষার উপর দখল থাকলে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে সহজে। আর ছোটো বাচ্চারা ভাষা শেখে খুব দ্রুত। একদম ছোটো থেকেই বাচ্চাকে বই পড়ে শোনান, ঘুমোতে যাওয়ার আগে তার বিছানার পাশে বসে বাংলা ও ইংরেজি বই পড়ুন নিয়ম করে। তাতে আপনার সন্তান নানা নতুন শব্দ শিখবে, পরিণত হউঠবে তার কল্পনাশক্তি।
৩. দৈনন্দিন কাজকর্মের সময়ে শিশুকে সঙ্গে রাখুন
যখন কাপড় পাট করে গুছিয়ে রাখছেন, বইয়ের আলমারি সাজাচ্ছেন বা খাবার বাড়ছেন তখন শিশুকে কাছে রাখুন। একটু বড়ো হলে তাকে আপনার কাজে সাহায্য করতে দিন। এতে সে দায়িত্ব নেওয়া শিখবে, তা ছাড়া ছোটোখাটো যোগ-বিয়োগ শেখানোরও এটাই সেরা সময়। একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করাও খুব জরুরি। তাতে একটি বাচ্চা খাবারের গুরুত্ব বোঝে, পরিবারের সবাইকে মর্যাদা দিতে শেখে।
৪. বাচ্চার সঙ্গে খুব সিরিয়াসলি খেলাধুলো করবেন
খেলার মাঠে মানুষ জীবনের সেরা শিক্ষাগুলো পায়। অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা, টিমমেটের জন্য অপেক্ষা করা, প্রতিদ্বন্দ্বীর মন বুঝে নেওয়া, প্রতিযোগীকে শত্রু না ভাবার মতো চিন্তাভাবনা বাচ্চার মাথায় চারিয়ে দিতে হবে আপনাকেই। পাশাপাশি খেলার মাঠে শিশুরা সমস্যা সমাধান ও নতুন রাস্তা খুঁজে বের করার কায়দাটাও শেখে। তাই সন্তানের খেলার সময়ে আপনাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে – শিশুকে পড়তে দিন, আঘাত পেলে সামলে নিতে দিন। সব সময়ে হাঁ হাঁ করে তেড়ে যাবেন না। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হোয়ার দরকার নেই।
৫. বাচ্চার সামনে আপনিও পারফেক্ট থাকার চেষ্টা করুন
যে কোনও সন্তান তার বাবা/ মাকে নকল করতে ভালোবাসে। আপনার সন্তানও তাই করবে। তাই বাচ্চার সামনে আপনাকেও নিজের সেরা ব্যবহারটাই দেখাতে হবে।