আপনার কি মনে হয়, আপনি একাই বেঁচে থাকার জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন? ভুল। আশপাশে তাকান ভালো করে, বুঝতে পারবেন আপনার চিন্তাভাবনায় কতটা গলতি আছে। মানুষ তো ছাড়ুন, গাছপালা বা পশু-পাখিকেই কি আর কম কষ্ট পোয়াতে হয়?
যেমন ধরুন হোয়াইটফ্লাই – এই অতি ক্ষুদ্র পতঙ্গটি বেঁচে থাকে গাছের রস খেয়ে। তার জন্য এরা বাসা বাঁধে গাছের পাতায়, পাতার নিচের দিকেই ডিম পাড়ে, বাচ্চা দেয়, বাচ্চা বড়ো করে। হোয়াইটফ্লাইয়ের কবলে পড়া গাছ ক্রমশ নিষ্প্রাণ, হলুদ হয়ে যায়। তবে একেবারে মরে না সাধারণত। যদি না হোয়াইটফ্লাইয়ের মাধ্যমে কোনও ভাইরাসের আক্রমণ হয়।
যে কোনও গাছেরই বেঁচে থাকা, বংশবিস্তার করা ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখার একটা সিস্টেম থাকে। পতঙ্গকে কাছে টানার জন্য গাছ রংবেরঙের ফুল ফোটায়, তার বুকে মধু ভরে রাখে। যে ফুলে রং নেই, তা রাতে ফোটে তীব্র সুগন্ধ নিয়ে। রাতচরা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করাই তার প্রধান কাজ।
কোনও গাছে কাঁটা থাকে – তার খোঁচা খেয়েই দূরে সরে যায় মানুষ ও পশু। বেঁচে যায় গাছের প্রাণ। তেমনই আবার পোকার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে গাছ কিছু বিষাক্ত উপাদানও বানায়।
অ্যাফিড বা হোয়াইটফ্লাইয়ের মতো পতঙ্গের আক্রমণ ঠেকাতেই গাছের পাতায় কিছু জিন এমন এক প্রোটিন তৈরি করে যা থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। এই বিষে কিন্তু গাছের নিজের কোনও ক্ষতি হয় না – তা নিশ্চিত করার জন্যেও আছে বিশেষ জিন। আর এই জিনের জালেই লুকিয়ে আছে হোয়াইটফ্লাইয়ের কারিগরি।
হোয়াইটফ্লাই করে কি জানেন? নিজেকে বাঁচানোর জন্যে গাছের বিষ তৈরির জিনগুলোকেই বেমালুম চুরি করে নেয়! তাতে হোয়াইটফ্লাইয়ের কোনও ক্ষতি হয় না, বরং গাছটা ক্রমশ হলদেটে, নিষ্প্রাণ হয়ে মরে যায়।
শুকনো গরমকালে হোয়াইটফ্লাইয়ের আক্রমণ বেশি হয় এবং একবার তা ধরলে কিন্তু আশপাশের সব গাছকেই শেষ করে তবে ছাড়বে। তাই এই সময়ে নতুন কোনও গাছ কিনেই সেটা পুরোনো গাছের সঙ্গে রাখবেন না। আগে কিছুদিন একেবারে আলাদা করে ছাদে বা বারান্দায় রেখে দেখে নিন তাতে কোনও পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা।
হোয়াইটফ্লাই আক্রান্ত গাছ প্রাথমিকভাবে খুব দুঃখীগোছের দেখায়। ফুল থাকলে তার রং মরে আসে। এই ধরনের লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হোন, স্থানীয় নার্সারিতে গিয়ে কথা বলুন।