আমরা জানি, পুষ্টিকর খাবার খেলেই শরীর সুস্থ থাকে। যে কোনও রোগ ব্যাধি থেকে দূরে থাকা যায় শরীরে শক্তি থাকলে। তাই আমরা কোভিড থেকে বাঁচার জন্য তেড়ে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, জিঙ্ক ইত্যাদি খেয়ে চলেছি আজ বছর খানেক হল। তাই না? সে সঙ্গে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়াটাও যোগ হয়েছে, কারণ প্রোটিন খেলেই শক্তি বাড়ে।
আমাদের শরীর বড়ো জটিল যন্ত্র – এত সহজ অঙ্কে সে মোটেই বিশ্বাস করে না। ফলে আপনি তাকে ঠেসে প্রোটিন খাওয়ালে সে মোটেই রাতারাতি শক্তিধর হয়ে যাবে না। বাড়তি প্রোটিন জমিয়ে রাখবে ফ্যাট হিসেবে, তার থেকে ওজন বাড়বে। অতিরিক্ত অ্যামাইনো অ্যাসিডের কারণে আপনার লিভার আর কিডনির উপর চাপ পড়বে। কনস্টিপেশন হবে, বাড়বে ইউরিক অ্যাসিড। যাঁরা করোনারি হার্ট ডিজিজে ভোগেন, বা কোলেস্টেরল হাই, তাঁদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যও খারাপ হবে ক্রমশ।
তবে ইদানীং দেখা যাচ্ছে, তার চেয়েও বড়ো কালপ্রিট হচ্ছে জিঙ্ক। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস, যাই বলুন না কেন – আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এ রাজ্যে, মৃত্যুহারও অত্যন্ত বেশি। একদল ডাক্তার বলছেন, করোনা ঠেকাতে মানুষ মুঠো মুঠো ভিটামিন ও মিনারেল খেয়েছে, ওষুধের দোকান থেকে বেবাক হাওয়া হয়ে গিয়েছে জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট। মিউকরমাইকোসিস আচমকাই এত বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরে জিঙ্কের উপস্থিতি।
ব্যাপারটা কীরকম? কোভিড আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য ডাক্তাররা নানা সাপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকেন অনেক সময়ে, তার মধ্যে জিঙ্ক ও ভিটামিন থাকে। সেখান থেকেই উৎসাহিত হয়ে বহু মানুষ আগেভাগেই জিঙ্ক ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। সত্যি বলতে কী, ভিটামিন আর জিঙ্ক বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেলে যে শরীর তাড়াতাড়ি সারে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি – তবে এগুলির ব্যবহার বেশ প্রচলিত।
সমস্যা হচ্ছে, শরীরে জিঙ্ক আর আয়রনের বাড়াবাড়ি থাকলে মিউকর ছত্রাকের বংশবৃদ্ধি হয় দ্রুত। যাঁরা এমনিতেই দুর্বল বা সুগার বেশি, অথবা কোভিড চিকিৎসার সময়ে স্টেরয়েড নিয়েছেন বলে রক্তে গ্লুকোজ মাত্রাছাড়া বেড়ে গিয়েছে, তাঁদের শরীরের দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতা মিউকর ছত্রাককে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না। জিঙ্ক আর লোহা তার বাড়বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
. না বুঝেশুনে ওষুধ খাবেন না, কাউকে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ারও দরকার নেই।
. সাপ্লিমেন্ট নয়, ব্যালান্সড ডায়েটের উপর আস্থা রাখুন, সেটাই আপনাকে সুস্থ রাখবে।