অক্টোবর এলেই বাঙালির ডানা গজায়। কিছু মানুষ আছেন, পুজোর ছুটিতে যাঁরা কলকাতা ছেড়ে দূরে কোথাও পাড়ি জমাতে অভ্যস্ত। এবার ধীরে ধীরে কোভিড সংক্রমণ কমছে, পাশাপাশি প্রকাশ্যে আসছে নজরকাড়া কিছু খবর – অমুক বিমানসংস্থা টিকিটের দামে ছাড় দিচ্ছে, তমুক দেশে গিয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে ভ্রমণ সেরে ফেরা যাচ্ছে, খুব কম খরচে দারুণ প্যাকেজ দিচ্ছে বেশ কিছু ভালো হোটেল – তা দেখে আপনারও খুব লোভ হচ্ছে নিশ্চয়ই?
সবচেয়ে বড়ো কথা, যাঁরা বেড়াতে ভালোবাসেন, তাঁদের সবারই চেনা-জানার মধ্যে কেউ না কেউ বিধিনিষেধ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন বাড়ির বাইরে, পাহাড় বা সমুদ্রে ফাঁকায় ফাঁকায় চমৎকার সস্তায় ভ্রমণ সেরে ফিরেছেন এবং সোশাল মিডিয়ায় হিংসে ধরানোর মতো ছবিসহ পোস্ট দিয়েছেন। ট্রেন বা প্লেম্নের টিকিট মেলে, এমন ওয়েবসাইটে ঢুকলে দেখবেন, পুজোর সময় বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার টিকিট কাটছেন কেউ কেউ। আপনি কী করবেন?
. সস্তায় বেড়িয়ে আসার সুযোগ আর পরিবারের সবার নিরাপত্তা – দুটোর মধ্যে বাছতে বলা হলে আপনি কোনটাকে বেছে নেবেন? এটা এই মুহূর্তে সবচাইতে জরুরি প্রশ্ন। অনেক ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
. ধরুন পাঁচদিনের ট্যুর প্ল্যান করে বেরোলেন, স্পটে গিয়ে কোভিডের লক্ষণ ফুটে উঠল শরীরে। তার পর সেখানেই ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইন হয়ে থাকতে হবে সবাইকে। বাড়তি সময় বা খরচের ধাক্কাটা গায়ে লাগবে না তো?
. পর্যটন শিল্পের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে, এ কথা একশো ভাগ সত্যি। তাই কম টাকায় হয়তো আপনি আগাম বুকিং করে ফেললেন, কিন্তু ঠিক বেড়াতে যাওয়ার আগে লকডাউন ঘোষিত হয়ে গেল। বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই হোটেল বা হোম স্টের মালিক – তখন কী করবেন?
. কত সাবধানে থাকবেন বেড়াতে গিয়ে? নিজের বাড়িটা স্যানিটাইজ করা না হয় আপনার হাতের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু হোটেল, গাড়ি, ট্রেন, প্লেন, বাসনপত্র, বিছানা, কম্বল, চাদর সর্বত্র ঠিকঠাক স্যানিটাইজেশন হচ্ছে কিনা বুঝবেন কীভাবে?
. প্লেনে ওঠার আগে আপনার কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে, তা ৪৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশি পুরোনো হলে বাতিল গণ্য হবে। অনেক রাজ্য বা হোটেলও তা চাইছে। পুজোর সময়ে যদি সংক্রমণ বেশি থাকে, তা হলে RT-PCR রিপোর্ট সময়ে মিলবে কিনা গ্যারান্টি নেই। ভুয়ো সার্টিফিকেট দাখিল করার বিপদ আছে। ট্র্যাভেল এজেন্টরা বেশ বুঝতে পারছেন বহু মানুষ এমনটা করছেন – সেক্ষেত্রে প্লেনে ওঠার আগেও ভ্রমণ বাতিল হতে পারে।
. যাদের ভ্যাকসিনেশন হয়নি, তারা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। তাতে কী বিপদ হতে পারে, আন্দাজ করাও মুশকিল। বাচ্চা বা বয়স্কদের নিয়ে ট্র্যাভেল করাও একইরকম বিপজ্জনক।
. করোনা ভাইরাস প্রতি মুহূর্তে চরিত্র বদলাচ্ছে। এখন থেকে আগাম হিসেব করে বলা সম্ভব নয় পুজোর সময়ে কেমন পরিস্থিতি থাকবে। তাই আপাতত কিছুদিন সমস্ত পরিকল্পনা স্থগিত রাখলেই ভালো করবেন।
. অনেকে কোনও একটা স্পটে লম্বা বুকিং করে গিয়ে টানা কিছুদিন থাকছেন, সেখান থেকেই বাচ্চার স্কুল বা অফিসের কাজকর্ম করছেন। তবে ভুললে চলবে না যে এখন কিন্তু রোগটা শহর থেকে গ্রামের দিকেই যাচ্ছে। দূরে কোথাও গিয়ে আটকে পড়লে মুশকিল হবে, কারণ সেখানে দরকার মতো ডাক্তার-ওষুধ কিছুই পাবেন না!