কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে আমরা সবাই ভীত, সন্ত্রস্ত। হাসপাতালে বেড নেই, ডাক্তাররা নিরুপায়, ওষুধ-অক্সিজেন কিছুই মিলছে না – এ সব খবর কম-বেশি সবাই জানেন। অনেকেরই আত্মীয়-বন্ধু কারও না কারও কোভিড হয়েছে, নিদারুণ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। তার ফলে আতঙ্কও সৃষ্টি হয়েছে জনমানসে।
অনেকেই ভাবছেন, বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার আর প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক-স্টেরয়েড মজুত রাখতে পারলে সমস্যার অর্ধেকটা তো কমবে! মনে রাখবেন, ডাক্তারের অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করে বসে না থেকে প্রাথমিক ধাক্কাটা নিজেরাই সামাল দেওয়ার চেষ্টা করার অর্থ হচ্ছে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনা।
গুগল সার্চের তালিকার একেবারে শীর্ষে আছে ‘কোভিড হলে কোন ওষুধ খাওয়া উচিত’, যাঁরা সেরে উঠেছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়েও কাজ চালাচ্ছেন অনেকে। তার ফল হতে পারে মারাত্মক।
কোভিডের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মিউট্যান্ট ভাইরাসের ফলে যে কোভিড হচ্ছে তার ক্ষেত্রে কোনও কপিবুক ট্রিটমেন্ট হয় না। আপনার ইমিউনিটি কতটা লড়াই দিতে পারছে ভাইরাসের বিরুদ্ধে, কতটা ‘ভাইরাল লোড’ শরীরে প্রবেশ করেছে, তার অগ্রগতি কেমন, ফুসফুস কতটা জখম হয়েছে, তার ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধে হচ্ছে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয় খতিয়ে দেখে ডাক্তাররা ওষুধ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে তাঁদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মানতে হচ্ছে, খোঁজ রাখতে হচ্ছে দেশ-বিদেশে হয়ে চলা গবেষণার অগ্রগতির দিকে।
পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, শতকরা ৮০ জন কোভিড আক্রান্ত সেরে উঠছেন স্রেফ প্যারাসিটামলেই। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কতটা কাজের, তা নিয়ে গবেষকরাই নিশ্চিত হতে পারছেন না। মারাত্মক কাশি হলে হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। জেনে রাখুন, না বুঝে স্টেরয়েড, রেমডেসিভির, টোসিলিজুমাব বা আইটোলিজুমাব নিলে জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (PGIMER) এর গবেষকরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, অ্যান্টিভাইরাল, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কোভিড রোগীর পক্ষে গভীর বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। স্টেরয়েড যেমন জীবাণুনাশের কাজে লাগে, তেমনই তার প্রভাবে শরীরে জীবাণুর বৃদ্ধির হার বেড়েও যায়!
তাই জ্বর এলেই প্যানিক করবেন না, মাথা ঠান্ডা রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে, তাঁর কথামতো ওষুধ খান, বিশ্রাম নিন, অপেক্ষা করুন, নিজেকে পরিবারের সবার থেকে আলাদা করে নিন। কোভিড না হলে দিন তিনেকের মধ্যেই জ্বর কমে যাবে। সাধারণত ডাক্তাররা তার পরেই কোভিড টেস্টের পরামর্শ দিচ্ছেন। হুট করে বুকের সিটি স্ক্যান করিয়েও লাভ নেই – ফুসফুস ভালোরকম জখম না হলে স্ক্যানে কোভিডের অস্তিত্ব ধরা পড়বে না।
সোশাল মিডিয়ায় অনেককেই নানা জ্ঞান দিতে দেখবেন – কেউ বলছেন একেবারে প্রথম দিন থেকে অ্যান্টিভাইরাল খেতে, কারও মত হচ্ছে গলা খুসখুস করলেই অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ শুরু করা উচিত। কেউ ঘরে গাছ রাখার পরামর্শ দেবেন — এ সবে প্রভাবিত হবেন না। আপনার চিকিৎসককে সাহায্য করুন, তাঁর কথা মেনে চলুন। তিনদিন পরেও জ্বর না কমলে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের পরিমাণ দেখুন বার বার। স্যাচুরেশন ৯৪-এর নিচে গেলে আগে চিকিৎসককে জানান। তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা মেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।