শীতকাল মানেই বাজার আলো করে আছে গাজর, বিট, শালগম, মুলোর মতো সবজি। উঠেছে নতুন আলু, রাঙালু, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ। গাজরের হালুয়া, বিটের স্যালাড, আলুর পরোটা, মুলোর ছেঁচকি না খেলে কি আর শীত জমে? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেকেরই দৃঢ় ধারণা, মাটির নিচের সবজি খেলেই বাড়বে রক্তে চিনির মাত্রা। সেটা কতটা ঠিক?
মাটির নিচে যে সব সবজি জন্মায়, তার কোনওটি শিকড়, কোনওটি আবার পরিবর্তিত কান্ড। প্রতিটিই মূলত শ্বেতসার বা কার্বোহাইড্রেট, গাছ সেখানে খাবার জমিয়ে রাখে ঠান্ডার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য। শীতের সঙ্গে লড়ার জন্য সবারই বাড়তি এনার্জি লাগে, গাছও তার ব্যতিক্রম নয়। শ্বেতসার ভাঙা সহজ, তা আপনার শরীর খুব তাড়াতাড়ি প্রসেস করে ফেলবে এবং রক্তেও গ্লুকোজের মাত্রা বাড়বে – এটা ঠিক।
কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে যে অদ্ভুত ব্যালান্সটা আছে, তা থেকে এই ধরনের কোনও সবজিই বঞ্চিত নয়। শ্বেতসারের পাশাপাশি প্রচুর ফাইবার থাকে গাজর, বিট, মুলো, শালগম ইত্যাদিতে। থাকে নানা জরুরি ভিটামিন আর মিনারেল। প্রাকৃতিক রঙে ঝলমলে যে কোনও খাদ্যবস্তুতেই থাকে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট। আদা, রসুন, পেঁয়াজের ফ্লেভার আপনার রান্নাকে করে তোলে সুস্বাদু। তাই একেবারে বাতিল করে দেওয়ার ভুলটা করবেন না যেন!
যাঁরা ডায়াবেটিক বা ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছেন, তাঁরা যে কোনও খাবারের মতোই এই ধরনের সবজি খাওয়ার সময়েও পরিমিতিবোধের কথাটা মাথায় রাখবেন। অল্প পরিমাণে খান। কোনও কিছুকেই ডিপ ফ্রাই না করে সেদ্ধ বা ভাপিয়ে নিন। নুন-মরিচ-সামান্য মাখন দিয়ে বেক করেও নিতে পারেন। আপনার মাটন বা চিকেন স্টুয়ের মধ্যে গাজর, বিট, পেঁয়াজ, রসুন ব্যবহার করুন। গাজর বা আলু দিয়ে রান্না করুন মেথি শাক। চেষ্টা করতে হবে খাবারের ফাইবার কনটেন্ট বাড়ানোর, তা হলেই আপনার সমস্যার সমাধান হবে।
হলুদের কারকিউমিন বাড়ায় ইমিউনিটি, কমায় কোলেস্টেরল। গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ আর কে মেলে। চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মুলোয় থাকে ভিটামিন সি, তা অ্যান্টি ফাঙ্গালও বটে। রসুনে থাকে ম্যাঙ্গানিজ, তা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বিট ব্লাড প্রেশার কমায়, আদা কমায় ইনফ্ল্যামেশন। পেঁয়াজ ঠেকায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে হওয়া সেল ড্যামেজ।
গাজর, বিট জ্যুস করেও খাওয়া যায়। তাতে সামান্য আদা দিতে পারেন। খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে কাঁচা সবজি খাওয়া উচিত, সেটা মনে রাখবেন। স্যালাড হিসেবেও খেতে পারেন এগুলি। তবে রোজ একই আনাজ খাবেন না, সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে রাখুন খাদ্যতালিকায়।