আপনি নিশ্চয়ই কান পরিষ্কার করার জন্য তুলো জড়ানো বাডসের সাহায্য নেন? তা হলে সেটা থাকবে অবৈজ্ঞানিক বস্তুর তালিকার একেবারে শীর্ষে। অনেকে ধাতব কাঠি ঢোকান, প্যারক্সাইড সলিউশনের সাহায্য নেন – সেগুলিও ওই লিস্টে পর পর রাখতে হবে।
আর যাঁরা সেফটিপিন বা চুলে লাগানোর ববি পিনের পিছনটা দিকে কান খোঁচান বা পাখির পালক ঢোকান? তাঁরা অতি উচ্চস্তরের মানুষ, এখনও যে কালা হয়ে যাননি, সে কারণেই বিশ্ব প্রকৃতির কাছে ঋণী থাকা উচিত তাঁদের।
এবার নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন যে তাহলে কান পরিষ্কার করা হবে কীভাবে? উত্তর হচ্ছে করবেন না! আজ্ঞে হ্যাঁ, করার কোনও প্রয়োজনই নেই, তার কারণ কান এমন একটি অঙ্গ যা নিজেই নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে।
আর যাঁরা মনে করেন যে কানের ভিতর জমে ওঠা খোল অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা জেনে রাখুন যে খোল বা সেরুমেন হচ্ছে এমন একটি সেলফ ক্লিনিং এজেন্ট, যা কানের ভিতর প্রবেশ করা যাবতীয় ময়লা, ধুলো, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জমা করে। তারপর একটা সময়ে নিজেই আলগা হলে বেরিয়ে আসে বাইরের দিকে।
আমরা যখন কথা বলি, খাবার চিবিয়ে খাই, তখন চোয়ালের মুভমেন্ট হয় এবং তার ফলেই ময়লা কানের বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে পারে। রোজ স্নানের সময়ে কানের বাইরের দিকটা কাপড়ে মুছে নিলেই মোটামুটি তা পরিষ্কার থাকে। কানের প্যাসেজে খোল না থাকলেই কিন্তু ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
যাঁরা খোল পরিষ্কার করার জন্যই বাডস, কাঠি বা আঙুল ঢোকান কানের ভিতরে, তাঁরা জেনে রাখুন এর ফলে ময়লা কানের আরও ভিতর দিকে চলে যায়, আপনি তার বেরিয়ে আসার রাস্তাটাই বন্ধ করে দেন। এগুলো করার কোনও দরকার নেই। ইন ফ্যাক্ট, কানে খুব বেশি ময়লা বা চুলকানি হচ্ছে বলে মনে হলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিন। খুব বেশিক্ষণ কানে ইয়ারপ্লাগ লাগিয়ে রাখলেও সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
কানের ইনফেকশন হলে তা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কানের পর্দা নষ্ট হয়ে যেতে পারে সে কারণে – এ কথাটা সব সময়ে মনে রাখবেন। যদি মনে হয় কান বন্ধ হয়ে রয়েছে, ব্যথা করছে, ভারী লাগছে, কানের ভিতর থেকে তরল বেরিয়ে আসছে, ভোঁ ভোঁ আওয়াজ পাচ্ছেন, ব্যালেন্স পাচ্ছেন না, মাথা ঘুরছে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ডায়াবিটিস, ইমিউনিটি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে খুব সাবধান। স্নান বা সাঁতার কাটার পর কান ভালো করে মুছে নিন। অনেকের রুমাল গুটিয়ে সরু করে কানেন ভিতরে সুড়সুড়ি দেওয়ার অভ্যেস থাকে – সে সব খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।