যে কোনও মা-বাবাই জানেন, সন্তানপালনের কাজটা কতটা কঠিন। বিষেষ করে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে – যেখানে গোটা দুনিয়া থমকে দাঁড়িয়ে আছে ভাইরাসের ভয়ে, বাড়ির বাইরে পা বাড়ানোর আগে দশবার চিন্তা করতে হচ্ছে, স্বাভাবিক জীবন যাপনের সব অঙ্ক পালটে গিয়েছে! কিন্তু তার মধ্যে সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে সঠিকভাবে, সেখানে তো আর আপনি চান্স নিতে পারবেন না!
মনে রাখবেন, মা-বাবা বা বাড়ির বড়োদের দেখেই আমাদের বাচ্চারা অনেক কিছু শেখে। তাই সবার আগে আপনাকে কিছু বদল নিয়ে আসতে হবে নিজের জীবনচর্যায়। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখবেন, বাচ্চা কতটা মন দিয়ে স্কুলের কাজ করছে সেটাই তার পরিশ্রম বা একাগ্রতার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। আর দু’-একদিনের আলসেমি দেখেই তার নিন্দে করাটাও ঠিক নয়।
১. নিজের কাজ সম্পর্কে আপনার শ্রদ্ধা আছে তো?
আপনি যদি নিজের কাজ নিয়ে চূড়ান্ত অগোছালো হন বা সারাক্ষণ বিরূপ মনোভাব দেখান, তা হলে আপনার সন্তানও কিন্তু তা-ই শিখবে। মন দিয়ে, যথাসম্ভব নিখুঁতভাবে কাজ করুন – এ কথা কিন্তু আমরা যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই বলছি। যিনি বাড়িতে থাকেন, সংসার করেন – তাঁর ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। যত্ন নিয়ে সময়ে রান্না শেষ করুন, ঘর গোছান এবং বাচ্চাকে বোঝান যে কোনও কাজ এভাবেই করা উচিত।
২. বাচ্চার সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেবেন না
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাকে নিজের সমস্যার সমাধান নিজের মতো করেই করতে দিন। দরকারে সে এক-আধবার বকুনি খাক, তাতে অসুবিধে নেই। নিজেরটা শেষ পর্যন্ত নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে হবে – এই বোধটা একেবারে ছোটো থেকেই তৈরি হওয়া দরকার। তার সব প্রজেক্ট বা হোম ওয়ার্ক শেষ করার দায়িত্ব তার, আপনার নয়। বিশেষ করে কিশোর সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামানো উচিত নয়। হোঁচট খেতে দিন, তার পর যখন কাজটা ঠিকভাবে হবে, সে নিজেই আনন্দ পাবে।
৩. আপনার চিন্তাধারা তার উপর চাপাবেন না
সন্তানকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। সে সেটাই করুক যেটা সে করতে চায়। আপনি চাপ দিয়ে কিছু করালে কাজটার উপর বিতৃষ্ণা আস্তে পারে। তবে হ্যাঁ, এটা বুঝিয়ে দিন যে ভালো না লাগলেও কিছু কিছু জিনিস করতে হয় – জীবনটা স্রেফ পছন্দের ভরসায় চলে না। তার অসুবিধেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন – তাকে যেন কোনও পরিস্থিতিতেই আপনার কাছে মিথ্যে বলতে না হয়।
৪. বাচ্চার মতামতকে গুরুত্ব দিন
সন্তান কিছুই জানে না, তাই তাকে পাত্তা দেওয়া উচিত নয় – এমন একটা চিন্তাধারা আঁকড়ে বসে থাকবেন না। বাচ্চার মতামতের উপর শ্রদ্ধাশীল হোন, সে যা বলছে সেটাও মন দিয়ে শুনুন। কোনও কোনও বিষয়ে হয়তো সে সত্যিই আপনার চেয়ে বেশি জানে – সেই সম্মানটুকু একবার দিয়ে দেখুন, আপনাদের সম্পর্কের রসায়নটাই পালটে যাবে!
৫. রাতারাতি ফলের আশা করবেন না
গাছ কিনে বাড়ি নিয়ে গেলেন, দু’দিন জল দিলেন আর তাতে ফল ধরল – এমনটা হয়? তা হলে সন্তানের থেকেও সেরকম কিছু আশা করবেন না। তাকে সময় দিন, নিজে ধৈর্য ধরুন। সাহায্য করুন, কিন্তু তাকে নিজেরটা সামলাতেও দিন। বিশ্বাস রাখুন। তার চারপাশে খুব পজিটিভ বাতাবরণ তৈরি করে রাখুন – তা হলেই ধীরে ধীরে সে চমৎকার, পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।