গত এক-দেড় বছরে আমরা একটা জিনিস খুব ভালো বুঝে গিয়েছি – সেই যে বড়োরা বলতেন না, স্বাস্থ্যই সম্পদ? সে কথাটা একেবারে ১০০ শতাংশ খাঁটি। ব্যাঙ্কে যত টাকাই থাকুক না কেন, শরীর খারাপ হলে তার সঙ্গে যুঝতে গেলে চাই ভিতরের শক্তি। আর অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আমাদের শরীর ক্রমশ পলকা হয়েছে।
গোটা একটা বছর জুড়ে বার বার শুনতে হয়েছে, যাঁদের ইমিউনিটি বেশি তাঁরা কোভিডকে হারিয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কার প্রতিরোধক্ষমতা বেশি আর কার কম। করোনা ভাইরাস শুষে নিচ্ছে জীবনীশক্তি — ধরে নেওয়া হচ্ছে, যাঁরা ফিট, তাঁরাই এর বিরুদ্ধে বাধার দেওয়াল তুলে ধরতে পারছেন।
ফিটনেসের সঙ্গে ইদানীংকালে ব্যায়াম বা বিশেষ জিম বা যোগচর্চা করাকে গুলিয়ে ফেলা হয়। যাঁরা খুব রোগা, তাঁরাই কি ফিট? অনেকে তো কম খেয়েও রোগা হতে পারেন না – তাঁরা সবাই কি তবে আনফিট? ডায়েটিশিয়ান ছাড়া কি ওজন কমানো যায়? যাঁদের ওটস, কিনওয়া বা মহার্ঘ্য ফল কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদের ওজন কি তবে কখনওই কমবে না?
এ সব প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেও জানেন, তবে মানার অভ্যেস্টা চলে গিয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েই স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করেছি আমরা। যে কোনওদিন, যে কোনও বয়সে আবার নতুনভাবে শুরু করা যায়।
. আপনি রোজ কী খাচ্ছেন আর কতটা নড়াচড়া করছেন, তার একটা হিসেব রাখুন।
. ওজন বাড়তে দেবেন না, আপনার উচ্চতা আর ওজনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
. ঠিক করে নিন যে সারা দিনে তিন-চার চাচামচের বেশি চিনি বা তেল শরীরে ঢোকাবেন না – কারণ শহরে আমরা যে ধরনের কাজ করি, তাতে এর চেয়ে বেশি দরকার পড়ে না। যদি কোনওদিন একটা মিষ্টি বা কেক খান, তা হলে কিন্তু বাড়তি অন্তত ২৫০-৩০০ ক্যালোরি বাড়তি হল। এবার হয় আপনাকে ব্যায়াম করে এই এনার্জিটা খরচ করতে হবে, না হলে শরীর তা মেদ হিসেবে জমিয়ে রাখবে।
. ময়দা, চিনি, ভাত সব কিছুই শরীর খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে গ্লকোজে পরিণত করে। এই ধরনের খাবার যত বেশি খাবেন, রক্তে চিনির মাত্রা তত বাড়বে।
. ভাজাভুজির ক্ষেত্রেও এক সমস্যা – রক্তে চিনি আর ফ্যাটের মাত্রা বাড়বে। তাই যাঁদের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে বা বর্ডারলাইনে আছে অথবা ওজন বেশি, তাঁদের এ সব থেকে দূরে থাকতে বলা হয়।
. ফল আর শাকসবজি খান বেশি করে। দামি কিছু লাগবে না, আপনি ঢেঁড়শ, উচ্ছে, করলা, পেঁপে, লাউয়ের উপরেই ভরসা রাখতে পারেন। অল্প তেলে রান্না করা শাক, কিছু সেদ্ধ আনাজ খাওয়া উচিত রোজ।
. ডাল, অঙ্কুরিত ছোলা-মটর, ডিম, ছানা, দই ইত্যাদি অল্প অল্প করে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলে ভালো হয়। তাতে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
. অল্প খান। যে কোনও খাবারই পেট ভরে খাবেন না, খানিক জায়গা ফাঁকা রাখুন। দুটো লুচি বা দু’ চামচ পোলাও খেলে অনেকদিন খেতে পারবেন।
. কী খাচ্ছেন বুঝে খান। অনেকেই ছেলেবেলায় শুনেছেন গরমকালে পান্তা ভাত খেতে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফারমেন্ট করা খাবার শরীর ঠান্ডা রাখতে আর ভালো ঘুমের জন্য জরুরি এ কথা ঠিক। কিন্তু নানা রকম ভাজাভুজি দিয়ে পান্তা ভাত খেয়ে শহরের মানুষ এসি চালিয়ে ঘুমোলে শরীরে প্রচুর বাড়তি এনার্জি জমবে – এই ধরনের ভুলের ফাঁদে পা দেবেন না।
. রাতারাতি কারও ওজন কমে না। তাই হতাশ হয়ে পড়বেন না। চেষ্টা চালিয়ে যান, নিয়ম মেনে চলুন। জীবনে একটা ডিসিপ্লিন আনুন।
. দিনে পাঁচ লিটার জল খান। খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে ও পরে জল খাওয়া উচিত।
. দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা জোরে হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা দরকার। ঘরের কাজকর্ম করলে তো খুবই ভালো হয়। ধীরে ধীরে হাঁটার সময় বাড়ান। বাড়িতে বাচ্চা বা পোষ্য থাকলে ছাদে তাদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারেন।
. ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য নিতে পারলে ভালো হয়, কেন না তিনি আপনার প্রইয়োজন বুঝে একটা ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেবেন। না হলে আপনাকেই লো ক্যালোরি খাবার খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে।
. একান্ত অসুস্থ না হলে ফিটনেস রুটিনে যেন কোনও বিরতি না আসে – ধারাবাহিক থাকা খুব জরুরি। রোজ খানিক সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখুন।
. রাতে কখনওই বেশি খাবেন না। তাতে হজমের সুবিধে হবে।