প্রতি বছরই শীত পড়ার সময় থেকেই বাতাস ক্রমশ ভারী হতে আরম্ভ করে – মাটির অনেক কাছাকাছি নেমে আসে দূষণের কণা। যাঁরা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের পক্ষে হেমন্তকাল জুড়ে সুস্থ থাকাটা ক্রমশ কঠিন হয়ে ওঠে। এবার আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাসের দাপট।
করোনা যেহেতু শ্বাসযন্ত্রের উপরেই আক্রমণ শানায়, তাই এবার বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সবাইকেই। সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে মরশুম বদলের সময় যে কোনও ভাইরাসই সক্রিয় হয়ে ওঠে বেশি। তাই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া আর উপায় নেই।
নেহাত প্রয়োজন না পড়লে বয়স্ক এবং অ্যাস্থম্যাটিকরা বাইরে বেরোবেন না। বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানিং আপাতত কিছুদিন মুলতুবি থাক। নিয়মিত স্টিম নিন। তাতে খোলা থাকবে আপনার নেজাল ক্যাভিটি আর এয়ার প্যাসেজ।
বাড়িতে ধূমপানের অভ্যেস থাকলে সেটাও ছাড়তে হবে। বিশেষ করে যাঁদের ঘরে ভারী পরদা বা কার্পেট পাতা আছে, তাঁদের সমস্যা আরও বেশি হওয়ার কথা কারণ সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা দূষণকণা আর গ্যাস কার্পেট ও পরদার গায়ে আটকে থাকে। সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোকের কথা আমরা আগেও শুনেছি, একে বলে থার্ড হ্যান্ড স্মোক। বাচ্চারা মাটির কাছাকাছি খেলাধুলো করে, তাদের এর ফলে শরীর খারাপও বেশি হয়। বাড়িতে কোনও অতিথিকেও সিগারেট খেতে দেওয়া অনুচিত। নিয়মিত কার্পেট আর পরদা কাচতে হবে।
হাতের কাছে আপনার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনহেলার রাখুন। সাধারণত শ্বাসকষ্টের রোগীদের দু’ ধরনের ওষুধ সঙ্গে রাখতে হয় – একটি ব্যবহৃত হয় রোগ ঠেকিয়ে রাখার জন্য, অন্যটি আচমকা অ্যাটাক হলে সামাল দেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়টি অবশ্যই হাতের কাছে রাখুন – রাতবিরেতে বিপদ হলে ডাক্তার নাও পেতে পারেন! ভুললে চলবে না, তাঁরাও মানুষ এবং তাঁদেরও পরিবার পরিজনের সঙ্গে ছুটি কাটানোর প্রয়োজন হতে পারে।
হিসেবের বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করবেন না। যত বেশি ভাজাভুজি আর মিষ্টি খাবেন, তত দুর্বল হবে আপনার ইমিউন সিস্টেম। ফল-সবজি খেতেই হবে, ভিটামিন সি-এর অভাব যেন না হয়। এই সময়ে বাজারে তাজা আমলকী আসতে আরম্ভ করে, রোজের ডায়েটে আমলকী ও পাতিলেবু/ বাতাবিলেবু রাখুন অবশ্যই।
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সাবধান। খুব সকালে বা বেশি রাতে বাইরে হাঁটা অথবা জগিং করতে যাবেন না, সে সময়ে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। বাড়িতে যোগাভ্যাস করলেও চলবে।
ধুলো ঝাড়ুন ভেজা কাপড় দিয়ে। শুকনো ডাস্টিং করলে আপনার আসবাবের উপর জমা ধুলো উড়বে বেশি, তাই সব সময় ভিজে কাপড় দিয়ে ধুলো মোছার কাজ সারুন। ঘরে ঢোকার মুখেই জুতো রাখার স্ট্যান্ড রাখা উচিত, কারণ জুতোর মাধ্যমে নানা দূষিত পদার্থ, ময়লা সরাসরি আপনার ঘরে ঢুকে পড়তে পারে। বাড়িতে পরার জুতোও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
ড্রাই ক্লিন করা বা ধোপার বাড়িতে কাচা জিনিসপত্র আগে রোদে দিয়ে তার পর ঘরে ঢোকান। ড্রাই ক্লিনিংয়ের সময় প্রচুর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। ঘরের ভিতরে তা সরাসরি আনবেন না, আগে অবশ্যই রোদ লাগিয়ে নিন। তাতে কেমিক্যালের প্রভাব কমতে আরম্ভ করবে।
এয়ার পিউরিফায়ারের ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এয়ার পিউরিফায়ার বাতাসের দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু তা সমস্যার সমাধান নয়, এটা মনে রাখবেন।
নিয়মিত এয়ার কন্ডিশনার পরিষ্কার করুন। এয়ার কন্ডিশনার নিয়মিত পরিষ্কার করাটা খুব জরুরি, তা না হলে ঘরের বাতাস আরও ভারী হয়ে পড়বে। তবে যাঁরা এসি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন, তাঁদের কথা আলাদা।
রান্নাঘরে চিমনি বা এগজ়স্ট ফ্যাট লাগান। রান্নাঘরে চিমনি না থাকলে আপনার রান্নার ধোঁয়া ঢুকে পড়বে ঘরে। বাথরুমেও এগজ়স্ট ফ্যান লাগানো খুব জরুরি।
ঘরের মধ্যে রাখুন সবুজ গাছপালা। তাতে বাড়বে অক্সিজেনের পরিমাণ। তবে যাঁরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন, তাঁদের ফুল বা বিশেষ করে পরাগরেণু থেকে দূরে থাকা উচিত।
দূরে থাকুন আতসবাজি থেকে। এই একটা বছর অন্তত বাজি না পোড়ালে ভালো থাকবে পরিবেশ, প্রকৃতি।