আমাদের ঘুম এক বিচিত্র রহস্য। তার অনেকটাই বিজ্ঞানীরা ভেদ করেছেন, তবে কিছুটা এখনও অজানার আঁধারে ডুবে থাকা। কি কি জেনেছি আমরা?
১. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঘুমের সময়ের পরিবর্তন হয়। বয়স্ক মানুষদের সন্ধে থেকেই হাই ওঠে, রাত দশটা বাজলে তাঁরা ঘুমের দেশে চলে যান। কিন্তু বাড়িতে কিশোর-কিশোরী থাকলে তারা মাঝরাত পেরিয়েও ঘুমোতে চায় না। বুড়োদের ঘুম ভাঙে ভোরে, অল্পবয়সিদের তখন ঘুম জেঁকে ধরে – উঠতে দেরি হয়ে যায়। স্কুল বা অফিস যাওয়ার আগে তাড়াহুড়ো চলে। তাই ভোরে ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে আগামী দিনেও।
২. আপনি কতক্ষণ ঘুমোচ্ছেন, সেটা জরুরি। তেমনই জরুরি ‘ভালো’ ঘুম হওয়া। সকালে উঠে যেন তরতাজা লাগে, চা বা কফি ছাড়াও দিনের কাজ শুরু করতে অসুবিধে না হয়। ঘুমের নানা সাইকেল থাকে, এক রাতের মধ্যে তার বেশ কয়েকটি আবর্তিত হয়। সারা রাতের মধ্যে অন্তত চার থেকে ছ’টি ঘুম-চক্র আবর্তিত হওয়ার কথা। প্রতিটির দৈর্ঘ্য মোটামুটিভাবে ৯০-১০০ মিনিট।
৩. ঘুমের দুটো পর্যায় থাকে, একটাকে বলে র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ – এই অবস্থায় আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। আর একটা নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ – এই অবস্থা থেকে কাউকে জাগানো কঠিন। এই সময়কার ঘুম ‘রেস্টোরেটিভ’, অর্থাৎ শরীরকে তা মেরামত করে সুচারুভাবে।
৪. র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ চলাকালীন আমাদের স্মৃতিশক্তি, শিক্ষা মৌলিকতার মতো মনোবৃত্তিগুলি পুষ্ট হয়। এই স্তরেই আমরা স্বপ্ন দেখি। সাধারণত ঘুম শুরু হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগে র্যাপিড আই মুভমেন্ট শুরু হয় না। রাতের শেষ দিকে বা বলা ভালো ঘুমের দ্বিতীয় ভাগেই র্যাপিড আই মুভমেন্ট বাড়ে, তখনই স্বপ্ন দেখি আমরা।
৫. স্বপ্ন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশ থেকে স্বপ্ন তৈরি হয়। র্যাপিড আই মুভমেন্ট চলাকালীন কিছু নিউরোট্রান্সমিটার কার্যকর হয়ে ওঠে, কিছু কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ডোপামাইন আর অ্যাসিটাইলকোলিন কার্যকর থাকে, সম্ভবত এদের প্রভাবেই আপনি কী ধরনের স্বপ্ন দেখছেন, তা নির্ধারিত হয়।
৬. স্বপ্নের কি কোনও অর্থ হয়? সিগমুন্ড ফ্রয়েডের তত্ত্ব মানলে হ্যাঁ হয় – তবে পরবর্তীকালে ফ্রয়েডের তত্ত্বকে মান্যতা দেওয়া যায়নি সেই অর্থে। অনেক নিউরো সায়েন্টিস্টের ধারণা, এগুলি ইলেকট্রিকাল ব্রেন ইমপালস ছাড়া কিছু নয়। মনের গভীরে থাকা স্মৃতি, কল্পনা, র্যানডম চিন্তাভাবনা উঠে আসে স্বপ্নে। ফ্রয়েডও মনে করতেন, মানুষ তার ইচ্ছেগুলোকেই স্বপ্ন হিসেবে দেখে। তবে ঘুম ভাঙার পর যেহেতু মানুষ তার স্বপ্নের কথা মনে রাখতে পারে না, তাই তা নিয়ে গবেষণা করাও দুষ্কর।