শীতের রুক্ষতার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এসে হাজির হয় ত্বকের নানা সমস্যাও। বিশেষ করে যাঁরা সোরিয়াসিসের মতো কোনও অটো ইমিউন ডিসঅর্ডারে ভুগছেন বা ত্বক মারাত্মকরকম শুষ্ক, তাঁদের অসুবিধে বাড়ে এই ঋতুতে।
সোরিয়াসিস কিন্তু দ্রুত ছড়ায় এবং অযত্ন করলে খুব কষ্ট দেয়। তাই একেবারে প্রথম থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত মাথার তালুতে, কনুই, হাঁটু বা পিঠে লাল চাকা চাকা দাগের মতো হয়ে সোরিয়াসিস দেখা দেয়, সাবধান না হলে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণের কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে। প্রথমে ভেবে বের করতে হবে যে ঠিক কোন কোন পরিস্থিতিতে আপনার সমস্যা বাড়ে। চড়া সুগন্ধি, গ্লিটারি মেকআপ, সিন্থেটিক মেটিরিয়ালের পোশাক ইত্যাদি নানা কারণে সোরিয়াসিস তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
সাধারণত সোরিয়াসিসে ত্বকের কোষবিভাজনের হার বেড়ে যায়, সেই বাড়তি কোষগুলিই আঁশের মতো করে জমতে থাকে। অসহ্য চুলকানি হয়, আবার বেশি চুলকোলে রক্ত বেরিয়ে আসে। দিনে মিনিট কুড়ি রোদ লাগালে ত্বক বিভাজনের হার নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে অনেকেই মনে করেন। তবে তার চেয়ে বেশি রোদ থেকে আবার হিতে বিপরীত হবে।
এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে এই সমস্যার সুরাহা আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ময়েশ্চরাইজ়ার ব্যবহারে কার্পণ্য করবেন না: স্রেফ মুখে-গলায় না, পুরো শরীরে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগানোর ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করলে চলবে না। স্নানের পর শরীর ভিজে থাকতে থাকতেই ক্রিম বা তেল লাগাতে হবে। তবে সোরিয়াসিস থাকলে সুগন্ধি ক্রিমের দিয়ে ঝুঁকবেন না। একস্ট্রা ভার্জিন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল চলতে পারে। ব্যবহার করতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলিও। সুগন্ধি ক্রিম থেকে কিন্তু সমস্যা বাড়ে।
পর্যাপ্ত জল পান করুন: শীতের দিনে তেষ্টা তেমন পায় না, তাই জলও কম খাওয়া হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জল না খেলে আপনার শারীরিক অসুবিধে হবে না। পর্যাপ্ত জল ও অন্যান্য তরল পান করা একান্ত জরুরি। জলের অভাবজনিত রুক্ষতা কিন্তু কোনও ময়েশ্চরাইজ়ারেই ঢাকবে না। তা ছাড়া শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন বের করে দিতেও জল আপনার প্রধান সহায় হতে পারে।
খুব গরম জলে স্নান করবেন না: গরম জলে স্নান করতে আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু খুব গরম জলে আপনার ত্বকের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে। হালকা গরমজলে স্নান করুন, খুব কড়া সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। লুফা বা জালি দিয়ে খুব রগড়ে ত্বক পরিষ্কার করারও কোনও প্রয়োজন নেই। ত্বক ভিজে থাকতে থাকতেই ময়েশ্চরাইজ়ার লাগান।
নরম শীতপোশাক পরুন: উল বা পশমিনা থেকেও কিন্তু আপনার ত্বকের সমস্যা হতে পারে। তাই নরম সুতি বা সিল্কের পোশাক বাছুন। ডাবল লেয়ার দেওয়া হুডিজ় বা জ্যাকেট পরতে পারেন। এমন কিছু পরবেন না যাতে ত্বকের অস্বস্তি বাড়ে।
খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন: খুব বেশি চিনি, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল, দুধ, লাল মাংস থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো। এগুলি শরীরের উত্তাপ বাড়ায়, তার থেকে আপনার সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।
সকালের দিকে গায়ে সূর্যের আলো লাগানোটাও জরুরি: সকাল 10টার মধ্যে গায়ে অন্তত আধ ঘণ্টার জন্য রোদ লাগানো একেবারে মাস্ট! ভিটামিন ডি স্তরে কোনও ঘাটতি না থাকলে দেখবেন ত্বকও ভালো থাকছে।
দূরে থাকুন স্ট্রেস থেকে: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়লেই বাড়বে আপনার ত্বকের রোগও। তাই মন ভালো রাখুন, হাসিখুশি থাকুন। ব্যায়াম করলে বা নানা কাজে যুক্ত থাকলে মন ভালো থাকে, তা জানেন তো?
খুব ঠান্ডা আর শুকনো বাতাবরণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে: আপনি যত শুকনো আবহাওয়ায় থাকবেন, তত বেশি শুকনো হবে আপনার ত্বক। তাই ঘরে হিউমিডিফায়ার লাগিয়ে নিন, উপকার মিলবে।