কর্কটরোগের নাম শুনলেই বেশিরভাগ মানুষের হাড় হিম হয়ে আসে। আর হবে না-ই বা কেন? বিপুল খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা, দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা, পরিবারের সকলের মারাত্মক স্ট্রেস – এ সবের মধ্যে দিয়ে যেতে কারই বা ভালো লাগে?
প্রতি বছর যত মানুষ কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তার এক তৃতীয়াংশই ঠেকিয়ে দেওয়া যায় কিছু সাধারণ সচেতনতা দিয়ে। নিত্যনতুন গবেষণা হচ্ছে রোগের প্রকৃতি বোঝার জন্য, কাজ হয়েছে তাতেও। এটুকু জানা গিয়েছে যে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
কী সেই পরিবর্তন জানতে চান? মেনে চলুন সুস্থ থাকার সহজপাঠ। অর্থাৎ, রোজ ঠিক সময়ে খাওয়া-পর্যাপ্ত ঘুমের রুটিনে কোনও বদল আনবেন না। বাড়ির ঘরোয়া রান্নাই আপনাকে সুস্থ রাখবে। রোজ ফল-সবজি খাওয়ার উপর জোর দিন। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন। উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ভারসাম্য রাখুন। জল খেতে হবে পরিমাণমতো। রোজ ব্যায়ামের জন্য খানিক সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। তার মানে এই নয় যে সবাই জিমে ভর্তি হবেন – স্রেফ হাঁটাচলা বা জগিং করলেও কাজে দেবে।
যদি আপনার পরিবারে কারও ক্যানসার থেকে থাকে, তা হলে আপনাকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রক্তে চিনির মাত্রা বেশি হোক বা কম, আপনাকে মিষ্টি ও ভাজাভুজি খাওয়ার পরিমাণ কমাতেই হবে। কারণ তা শরীরের তাপমাত্রা ও ইনফ্ল্যামেশন বাড়ায়, বাড়তি প্রদাহ কিন্তু ক্যানসারের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। স্ট্রেস নেওয়া চলবে না। কেরিয়ার বা ব্যক্তিগত জীবনে বাড়তি চাপ থাকলে যোগাভ্যাস করুন, প্রাণায়াম করুন, তার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মদ্যপান ও ধূমপান যে শরীরের কোনও কাজে লাগে না, উলটে বাড়ে ক্ষতির মাত্রা, তা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন এতদিনে? ধূমপান কিন্তু শুধু আপনার নয়, পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ঘরে সিগারেট খেলে পরদা, বিছানার চাদরেও ধোঁয়া আটকে থাকে। তামাক চিবোলে মুখ বা জিভের ক্যানসার হতে পারে, সেই সঙ্গে ওবেসিটির থাবা এড়িয়ে চলাও একান্ত জরুরি।
সবচেয়ে বড়ো কথা, শরীর কী বলতে চাইছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন। কোনও ঘ্যানঘ্যানে সমস্যা, তা সে মাথা ব্যথা হোক বা পেট খারাপ – দীর্ঘদিন টানা চলতে থাকলে ফেলে রাখবেন না। ডাক্তার দেখান। যদি কোনও কারণ ছাড়াই ক্লান্ত লাগে সারাক্ষণ, গলা ভেঙে থাকে, কিছুতেই কাশি না সারে, ঢোক গিলতে অসুবিধে হয়, ত্বকের নিচে বা স্তনে কোনও লাম্পের অস্তিত্ব টের পান, দাঁত বা মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়, তা হলে ফেলে রাখবেন না। বয়স ৪০ ছাড়ালেই নিয়মিত চেকআপ করানো দরকার।
এ সবের পরেও যদি কারও ক্যানসার ধরা পড়ে, বিচলিত হবেন না। চিকিৎসা এখন অনেক আধুনিক হয়েছে, ডাক্তারের উপর আস্থা রাখুন। নিয়ম মেনে ওষুধ খান, খাওয়াদাওয়া করুন। পজিটিভ অ্যাটিটিউড দিয়েই আপনি ক্যানসারকে হারিয়ে দিতে পারবেন!