আমাদের শরীরে যে সব পথে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঢোকে, তার একটা নাক হলে অন্যটা হচ্ছে মুখ। যার মুখের ভিতরকার স্বাস্থ্য যত খারাপ, তার শরীরে ভাইরাস জাঁকিয়ে বসার সুযোগ পাবে তত তাড়াতাড়ি। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, ওরাল হাইজিন ভালো হলে করোনা ভাইরাসও তেমন ঝামেলা পাকাতে পারে না।
কিন্তু যাদের পায়োরিয়া, জিঞ্জিভাইটিসের মতো মাড়ির সমস্যা আছে, দাঁতের গোড়া আলগা, তামাকের নেশা করে, তাদের ক্ষেত্রে ভাইরাসও খুব সহজেই সমস্যা তৈরি করতে পেরেছে। দাঁতে প্লাক জমতে দেওয়া যাবে না, তা ক্রমশ মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাবে। দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতার কারণে মুখের মধ্যে খুব দ্রুত বংশবিস্তার করবে ভাইরাস, তা ফুসফুসেও পৌঁছবে তাড়াতাড়ি।
নিয়মিত ভালো করে ব্রাশ করা জরুরি। দাঁতের ফাঁকে যাতে প্লাক না জমে, তাই ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করুন। ব্রেকফাস্টের পরে এবং ডিনারের পরে অতি অবশ্যই ব্রাশ করা উচিত। ফ্লস করতে হবে নিয়ম করে। সম্ভব হলে দিনে দু’বার ব্রাশের সঙ্গে সঙ্গে দু’বারই ফ্লসও ব্যবহার করুন।
ব্রাশ বদলান ব্রিসল নষ্ট হয়ে গেলেই। বেশি হার্ড ব্রাশ ব্যবহার করবেন না, বেছে নিন সফট ব্রাশ। দাঁত মাজার সময়ে বেশি জোরে চাপ দেবেন না, হালকা হাতে বৃত্তাকার প্রেশার দিয়ে দাঁত মাজা উচিত। ব্রাশ ব্যবহারের আগে আর পরে অবশ্যই তা ধুয়ে নেবেন।
দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের পরত সরাতে দারুণ কার্যকর হচ্ছে ফ্লস। যে কোনও ওষুধের দোকানে তা কিনতে পাওয়া যায়। রাতে দাঁত মাজার সময় অবশ্যই ফ্লস করে পুরো মুখগহ্বর পরিষ্কার করে নিতে হবে। ডেন্টিস্টের কাছে গেলেই তিনি আপনাকে ফ্লসের ব্যবহারবিধি শিখিয়ে দেবেন।
খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফল ও সবজি রাখুন, কমিয়ে দিন সফট ড্রিঙ্ক, চকোলেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া। দিনের পর দিন এই ধরনের খাবার খাওয়ার কতগুলো বিপদ আছে। মনে রাখবেন,আমাদের দাঁতগুলো টানা একটা সমতল স্ট্রাকচার নয়, তার মধ্যে ভাঁজ আছে, ফাঁক আছে। এর ফাঁকে ফাঁকেই এই ধরনের খাবার থেকে গিয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে।
এই স্তরটি অত্যন্ত চটচটে ও আঠালো এবং দাঁতের গায়ে তা পরতের মতো আটকে যায়। সমস্যা হচ্ছে, খুব প্রপারলি ব্রাশ না করলে এই স্তরটা সরার কথা নয়। ফলে দিনের পর দিন তা জমে যায় এবং ক্যালকুলাস তৈরি করে। ক্যালকুলাস কী? ক্যালকুলাস হচ্ছে ক্যালশিয়াম, স্যালাইভা, স্যালাইভা বা লালার মধ্যে থাকা নানা মিনারেল কম্পাউন্ডের সঙ্গে মিশে তৈরি হওয়া কঠিন একটি স্ট্রাকচার। এই লেয়ার আমাদের জিঞ্জাইভা বা মাড়ির ‘রিসেশন’ ঘটায়। মাড়ি দুর্বল হয়ে দাঁত আলগা হয়ে যায়।
মাঝে মাঝে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া জরুরি। তিনি দেখে বলে দেবেন আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক কতটা খারাপ বা ভালো। নিজের চারপাশের সুরক্ষাবলয় শক্তিশালী করে তোলার সেরা সময় এটাই – সাবধানে থাকুন।