আপাতদৃষ্টিতে দেখলে চুল পড়া ঠেকানোর হাজারো সমাধান আমাদের চোখের সামনেই হাজির – অজস্র ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু, তেল, আয়ুর্বেদিক ওষধি, বিউটিশিয়ানের টোটকা, ইনস্টা রিল সারাক্ষণ চারদিক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু যাঁরা এই সব পদ্ধতি ট্রাই করে দেখেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই একবাক্যে মেনে নেবেন যে কাজের কাজ খুব একটা হয় না কোনওটাতেই।
. তার কারণ চুল পড়ার আসল কারণ প্রত্যেক মানুষভেদে আলাদা হয়। হ্যাঁ, কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে সার্বিক দুর্বলতার কারণে চুল পড়ে। শরীর সেরে গেলে আবার সে চুল ফিরেও আসে। এ দেশের অধিকাংশ মহিলাই রক্তাল্পতায় ভোগেন, সেই কারণেও চুল ঝরে পড়তে পারে – কোনও তেল, শ্যাম্পু লাগিয়েই এই সমস্যার সমাধান হবে না। ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদ দেখিয়ে ডায়েটে পরিবর্তন আনলে তবেই পরিস্থিতি পালটাবে। কোনও হেয়ার ডাই বা শ্যাম্পু/ কন্ডিশনারের রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণেও চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে।
. পুরুষদের মধ্যে অ্যালোপেশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই যাঁদের পরিবারে বাবা-কাকা বা মামা-দাদুর টাক আছে, তাঁদের একটু অল্প বয়স থেকেই সতর্ক হওয়া ভালো। চেষ্টা করলে এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে হয়তো চুল পড়ে যাওয়া বা পাতলা হওয়ার হার খানিক ঠেকানো সম্ভব। সেই সঙ্গে সঠিক ডায়েট খাওয়ার উপরেও জোর দিতে হবে। তবে জিনগতভাবে টাক পড়ার উত্তরাধিকার থাকলে কিন্তু সেটা ঠেকানো মুশকিল।
. চুল পাতলা হওয়া শুরু হয় সামনের হেয়ারলাইন থেকে –- কারও কারও ক্ষেত্রে মাথার মাঝখান থেকেও টাক পড়া শুরু হতে পারে অবশ্য। বিছানায়। বালিশের ঢাকনায়, তোয়ালেতে গোছা গোছা চুল উঠতে দেখলে তাই ভালো কোনও ডার্মাটোলজিস্টের দ্বারস্থ হোন। পুষ্টিবিদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন – তাঁদের পরামর্শ নিয়ে এগোলে চুল বেশিদিন ভালো থাকবে।
. কারও কথা শুনে ফ্ল্যাক্সসিড জেল, ভিটামিন ই, গ্লিসারিন, দই, মধু বা চুল পড়া বন্ধ করে দেওয়ার গ্যারান্টিযুক্ত শ্যাম্পু ইত্যাদি লাগাবেন না স্ক্যাল্পে। এর কোনওটার সঙ্গে আপনার মাথার ত্বকের বিক্রিয়া হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
. সঠিক খাবার খান। আমলকী, কমলালেবু, পালংশাকসহ অন্য নানা সবুজ পাতাযুক্ত সবজি খাওয়া একান্ত জরুরি।
. স্ট্রেস, দূষণ, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত রিফাইন্ড খাবার বা ভাজাভুজি খেলেও চুলের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। চুলে খানিক রোদ-হাওয়া লাগান, খুব বেশি হিট ট্রিটমেন্ট দেবেন না।
. সবচেয়ে জরুরি কথা – চুল পড়ে যাচ্ছে বা পাতলা হয়ে যাচ্ছে বলে অযথা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। সারা পৃথিবীতে বহু মানুষের এ সমস্যা আছে। বলিউড সেলেব্রিটি বা ক্রিকেটার/ মডেলরা প্রচুর টাকা খরচ করে নিয়মিত হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে সুন্দর থাকেন – কিন্তু এ সব খবর বাইরে আসে না। চুল থাক বা না থাক, আত্মবিশ্বাস থাকলে সবাইকেই দেখতে ভালো লাগে। সুস্থ থাকার চেষ্টা করাটা বেশি জরুরি।